শীতের শুরুতে বক্সা পাহাড়ের কমলালেবু এল আলিপুরদুয়ারে

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২৭ নভেম্বর: নভেম্বর মাসের শেষ হলেও ইতিমধ্যেই শীতের দাপট দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ জুড়েই। আর শীতের শুরুতেই আলিপুরদুয়ার বাজারে চলে আসল বক্সা পাহাড়ের কমলালেবু। গত একসপ্তাহ ধরে জেলাসদরের বাজারগুলিতে ভিনরাজ্যের কমলালেবুর পরিবর্তে বক্সার কমলালেবুই বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। তাই জেলাসদরের অধিকাংশ ফলের দোকানিরা বক্সার কমলালেবু বিক্রি করছেন। স্বাভাবিকভাবেই নিজের এলাকার চাষ হওয়া শীতের এই ফলের স্বাদ গ্রহন করা থেকে কেউ নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন না।

উল্লেখ্য, নাগপুরের কমলালেবু ও দার্জিলিং-এর কমলালেবুর পরিমান সিংহভাগ। তারমধ্যেও বক্সা পাহাড়ে কিছু পরিমান চাষ হওয়া এই লেবু আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছে গত কয়েকবছর। মরসুমের একদম শুরুতেই অবশ্য বক্সার লেবুতে মিষ্টতা কিছুটা কম থাকে বলে কমলালেবু প্রেমীরা জানিয়েছেন। তবে ডিসেম্বর মাস শুরু হতেই স্বাদে নাগপুরের কমলালেবুকেও টেক্কা দেয় বক্সা পাহাড়ের কমলালেবু।

বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার জেলাসদরের বৌজারের এক ফল বিক্রেতা জানান, একপিস লেবু আকৃতি অনুযায়ী ৫ টাকা ও ১০ টাকা দামে আপাতত বিক্রি হচ্ছে। বক্সা পাহাড়ে ফলন কম। সেখানকার কমলালেবু চাষিরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, গাছে লেবু আসলেও তাতে পোকার আক্রমণে প্রচুর লেবু নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি বাঁদরের উৎপাতেও গাছেই নষ্ট হয়েছে কমলালেবু। আমাদের আশা যোগান বাড়লে দামও কমে যাবে।”

উল্লেখ্য, আকৃতিতে কিছুটা ছোট, পাতলা খসখসে চামরা, কমলা রং এর উপর হাল্কা সবুজ ছোপ বক্সার লেবুকে সহজেই অন্যান্য এলাকার লেবু থেকে পৃথক করা যায়। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতর দুর্গম বক্সা পাহাড়ের এক কমলালেবু চাষি সোনু ডুকপা জানান, “গত কয়েকবছর ধরে ফলন ভাল হচ্ছে না। উৎপাদন ভালো হলে বক্সার মানুষ শুধু কমলালেবু চাষ করেই সারা বছরের পরিবারের জন্য সিংগভাগ উপার্জন করতে পারতেন।”

বক্সা পাহাড়ের সদর বাজার, লালবাংলা, তাসিগাঁও, ডোরে গাঁও, লেপচাখার মত গ্রামগুলিতে এবছর কমলালেবু চাষ করেছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, বক্সা পাহাড়ের কমলালেবু অতীতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লেবুকেও স্বাদে গন্ধে টেক্কা দিত। কৃষি দফতরের উচিৎ আরও বেশি করে বিষয়টি নিয়ে ভাবা। পাশাপাশি দুর্গম বক্সা পাহাড়ের থেকে সহজে কমলালেবুর বিপননের চেষ্টা করা। কেন বক্সায় কমলালেবু তার সর্বোচ্চ উৎপাদন সীমায় উন্নীত হতে পারছে না তা অবশ্যই গবেষণা করে দেখা দরকার।

আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সভাপতি অমল দত্ত বলেন, বক্সায় ১৯৯৩ সালের পর কমলালেবু চাষ কার্যত নিষিদ্ধ হয়েছিল। বনদফতরের অনুমতি ছিল না। এলাকাটি কোর এলাকায় ছিল। তবে পরিবেশ বাঁচিয়ে সব দিক ঠিক রেখে কমলালেবুর চাষ হলে বক্সা পাহাড়ের আর্থসামাজিক অবস্থা পাল্টে যেত। বাস্তুতন্ত্রের উপর, মাটির উপর যথেষ্ট প্রভাব আছে কমলা গাছের। এখন উদ্যান পালন দপ্তর কাজ করছে পাহাড়ে। এটা ভালো লক্ষ্মণ। তবে গাছে ফাঙ্গাস ধরা, পোকাতে নষ্ট হবার কারন কি তা গভীরে গিয়ে ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ। আদমা পাহাড়ের কমলালেবু একসময় উত্তরবঙ্গের সেরা লেবুর তকমা পেত।

এদিকে,আলিপুরদুয়ারে তিনটি বাজারেই আপাতত বক্সার লেবু বেশ ভালই বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতাদের একাংশ। জানা গেছে, মাদারিহাট, বীরপাড়া ব্লকের টোটোপাড়া এলাকাতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। তবে নিজের এলাকার কমলালেবুর স্বাদ পেতেই বেশি পছন্দ করছে কমলালেবুপ্রেমীরা।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here