“মানুষের প্রাপ্য টাকায় কেউ ভাগ বসালে আমাকে চিঠি লিখবেন”, ঝাড়গ্রামের সভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী

অমরজিৎ দে, ঝাড়গ্রাম, ১৯ মে: বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতের বিকাশ ও পৌরসভার উন্নয়নে গতি আনতে বুথ স্তরের কর্মীদের মহা সম্মেলন হয়।
ওই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সভায় তাঁর ভাষণে বলেন, মা-বোনদের ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আগে ঝাড়গ্রামের মানুষ রাস্তায় বের হতে ভয় করতো। এখন মানুষ সারাদিন রাস্তায় বের হয়ে নিজেদের কাজ করেন। সিপিএম কোথাও কাউকে যেতে দিত না। ১৯৯৩ সালে বেলপাহাড়ি থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করেছিলাম। বাইকে চেপে একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে মানুষ তিন মাস ভাত খেত, ৯ মাস পিঁপড়ে ও গাছের শিকড় সিদ্ধ করে খেত। বেলপাহাড়ির আমলাশোলে অনাহারে মানুষের মৃত্যুর মিছিল লেগেই ছিল। তখন সিপিএম কিছু করেনি। আর আজ বড় বড় কথা বলছে। তৃণমূলের কেউ নেতা নয়, সবাই কর্মী। আগে চিরকুট দিয়ে চাকরি হতো। আস্তে আস্তে সব চ্যাপ্টার খুলবো। এতদিন ভদ্রতা দেখিয়েছি।

রাজ্যের পাওনা টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না, গম দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্র সেন্ট্রাল এজেন্সি দিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চালাচ্ছে বাংলায়। কারণ আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। লোকসভায় বিজেপি হারবে বলে এখন থেকেই ভয় দেখাচ্ছে। তিনি বিজেপির হুমকিকে ভয় পান না বলে জানান। অনেক পরিশ্রম করে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কেউ প্ররোচনা দিয়ে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করলে তা সহ্য করা হবে না। কেউ ভয় দেখালে পুলিশকে বলবেন। জঙ্গলমহলে মাওবাদী নেই। যারা ছিল তাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে এবং স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারা এখন প্রশাসনের লোক হয়ে কাজ করছে। মানুষের কোনো কাজ ফেলে রাখা যাবে না। মানুষের প্রাপ্য টাকা থেকে কেউ যেন ভাগ না বসায়। বসালে আমাকে চিঠি লিখবেন।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষকে প্রাণে মারতে চায় কেন্দ্র সরকার। সিপিএম, বিজেপিকে ক্ষমা করবেন না। সিপিএম বিজেপি হলো দুই দালাল। সিপিএম বিজেপি ও কংগ্রেসকে জগাই, মাধাই, গদাই বলে তিনি কটাক্ষ করেন। তিনি দলীয় কর্মীদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার নির্দেশ দেন। ঝাড়গ্রাম আগামী দিনে পথ দেখাবে। আমেরিকা, রাশিয়া সহ বিশ্ব জয় করবে ঝাড়গ্রাম। আগে স্বাস্থ্যকর জায়গা ছিল ঝাড়গ্রাম। এখন স্বাস্থ্যকরের পাশাপাশি শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জঙ্গলমহল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এখন জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম আমার গর্ব। আমি আপনাদের পাহারাদার দিদি। আপনারা ভয় পাবেন না, কোনো হুমকির কাছে মাথা নত করবেন না। মানুষের জন্য কাজ করবেন মানুষের সাথে থাকবেন। ঝাড়গ্রাম শান্তি ও ভালো জায়গা। আমি দুষ্টুমি করলে আপনারা আমাকে শাসন করবেন। ঝাড়গ্রাম আমার অহংকার, গর্ব। আমি কেউ নই, আজ আছি কাল নেই। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। দলের কর্মীরা আসল সম্পদ বলে তিনি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন।

বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, হেরে গিয়েও লজ্জা নেই। হিংসা আর সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। বিজেপি বাংলায় অশান্তি সৃষ্টি করার চক্রান্ত করছে। বিজেপির চক্রান্ত সফল হবে না বলে তিনি তীব্র ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ করেন। আগামী দিনে ঝাড়গ্রামের সমস্ত আদিবাসী পরিবারকে বাসস্থান করে দেবে সরকার। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উন্নয়নে যা যা দরকার সরকার সবকিছুই ব্যবস্থা করছে। যেখানে ঝাড়গ্রামে জলের সংকট রয়েছে সেই জলের সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত গতিতে কাজ হবে। বর্ষার আগেই কাজ করুন চটপট। যাতে বর্ষার আগে উন্নয়নমূলক যেসব কাজ বাকি রয়েছে তা করা যায় সে দিকে তিনি নজর রাখার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়, বেলপাহাড়ি, সাঁকরাইল সহ জেলার কোথায় কি কি কাজ হয়েছে গত ১১ বছরে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর তা তিনি তাঁর ভাষণে বিস্তারিতভাবে জানান।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আবার ঝাড়গ্রাম আসবো আপনাদের সাথে আবার মিলিত হবো। ঝাড়গ্রাম আমার গর্ব। আমি ঝাড়গ্রামের উন্নয়নে যা যা কাজ করার প্রয়োজন সেই কাজ করে যাব। কে কি বলল তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না। আমি মানুষের জন্য কাজ করবো, মানুষের পাশে রয়েছি, আগামী দিনেও থাকবো।

আজকের সভায় প্রধান বক্তা দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে আসার সময় সম্মেলনে উপস্থিত মহিলারা শঙ্খধ্বনি করে তাঁকে স্বাগত জানান। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঞ্জি শাড়ি দিয়ে আদিবাসী প্রথায় সম্মান জানান প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।

এদিন সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, মানস ভুঁইঞা, ইন্দ্রনীল সেন, জোৎস্না মান্ডি, শ্রীকান্ত মাহাত, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি তথা বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা, বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাত ও বিধায়ক দুলাল মুর্মু, প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ উমা সরেন সহ তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ও অন্যান্য নেতৃত্বরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *