লাল্টু সেখের দেহ ফিরলো গ্রামে, ধৃত চার জনের আট দিনের পুলিশি হেফাজত, দুই জনের জেল 

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ৬ ফেব্রুয়ারি: কংগ্রেস নয় ধৃতরা সকলেই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। সোমবার রামপুরহাট মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমনই দাবি করলেন ধৃত সুজ্জাউদ্দিন শেখের স্ত্রী সোনালী বেগম। তিনি এই ঘটনাকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে দাবি করেছেন। তবে নিজের স্বামী এবং দুই ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন সোনালী।”

এদিন দুপুরে টানটান উত্তেজনার মধ্যে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে নিহত লাল্টু শেখের দেহ পৌঁছল গ্রামে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোটা গ্রামেই পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়েছিল। মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই গ্রামে মানুষের ঢল নামে। সর্বক্ষণের জন্য মৃতের পরিবারের পাশে ছিলেন তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। পাশাপাশি, ধৃত ছয় জনকে সোমবার রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে চারজন অর্থাৎ সুজাউদ্দিন, তার দুই ছেলে সহ গব্বার শেখের আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। বাকি দুই অভিযুক্ত আকবর ও ছোট্টু মালের চোদ্দ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক সৌভিক দে।

উল্লেখ্য, শনিবার রাতেই বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় নিউটন শেখের। গুরুতর আহত অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় লাল্টু শেখকে। রবিবার সকালে তারও মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে তার শবদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অন্যতম অভিযুক্ত সুজাউদ্দিন মাড়গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান। ২০১৩-১৮ সাল পর্যন্ত তিনিই মাড়্গ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। ২০১৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে ভুট্টু শেখকে পঞ্চায়েত প্রধান করার পরই সুজাউদ্দিন ও ভুট্টুর দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।

তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিতে যোগ দেয় সুজাউদ্দিন। মাস তিনেক আগে কংগ্রেসে ফিরে যান সুজাউদ্দিন। সৈয়দ সিরাজ জিম্মি জানান, সুজাউদ্দিন বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপিতে যোগ দেয়। পরে কংগ্রেসে যোগ দেয়। ভুট্টু এলাকায় ভালো তৃণমূল সংগঠক ছিল। সেকারণেই তার উপর এত আক্রোশ। যদিও সুজাউদ্দিনের স্ত্রী সোনালী বেগমের দাবি, তাঁর স্বামী তৃণমূল করে। তিনি রামপুরহাট মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমার স্বামী এখনও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। নিয়মিত পঞ্চায়েতের সভায় হাজির হয়ে খাতায় সই করেছেন। কেউ কেউ মিথ্যা করে স্বামী কংগ্রেসে ঢুকেছে বলে দাবি করছেন। এটা তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাছাড়া যারা মারা গিয়েছে দুজনেই স্বামীর সঙ্গে থাকত। এখন যিনি প্রধান রয়েছেন তিনিও স্বামী হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছেন। তবে স্বামী ঘটনার সঙ্গে কোনো ভাবে যুক্ত ছিল না। স্বামী বাড়িতেই ছিল। ছেলেরা খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোচ্ছিল। সেই সময় পুলিশ তুলে নিয়ে গেল। ওরা নির্দোষ”।

সরকারি আইনজীবী সুরজিত সিনহা বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফের চারজনকে আদালতে তোলা হবে”।

ধৃতদের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর বাড়ি বলেন, “যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সকলে নির্দোষ। ধৃত সুজ্জাউদ্দিন এখনও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। রাজনৈতিক কারণেই তাকে ফাঁসানো হয়েছে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *