জাতীয় সড়কের বেহাল দশা, বীরভূমে রাস্তায় ধান পুঁতে প্রতিবাদ এলাকার মানুষের

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ২৩ জুন: বদলেছে রাস্তার নম্বর। কিন্তু বদলায়নি রাস্তার বেহাল দশা। তাই এবার জাতীয় সড়কে ধান গাছ পুঁতে প্রতিবাদ জানালেন নলহাটির মানুষ।

প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকে পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়ক কেন্দ্র অধিগ্রহণ করে। ১৯৯৩ সালে বর্ধমানের পানাগড় ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মুর্শিদাবাদের মোড়গ্রাম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংযোগকারী রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। সেই মতো ওই বছরই ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় এশিয়ান ফাউন্ডেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (এফকন)। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক নাম দিয়ে রাস্তার কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে রাস্তার সম্প্রসারণ ব্যয় ধরা হয় ১৭০ কোটি টাকা। ঠিক হয় দুটি পার্টে কাজ শেষ করা হবে। সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বীরভূমের মল্লারপুরে রেলের ওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। ঢালাই চলাকালীন ভেঙ্গে পড়ে ব্রিজের কিছু অংশ। পরে জানা যায় এফকন এক অনভিজ্ঞ ঠিকাদারি সংস্থাকে ওই ৫৫০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের কাজ করাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এদিকে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে গিয়ে এফকন মুর্শিদাবাদের কিছু ছোট ঠিকাদারি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করায়। ফলে নলহাটি থেকে মোড়গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার কাজ নিম্নমানের হয় বলে অভিযোগ।

১৯৯৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু রাস্তার উদ্বোধন করেন। সে সময় তিনি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ককে গর্বের রাস্তা বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পরেই রাস্তা ভাঙ্গতে শুরু করে। এরই মাঝে রাস্তার নাম বদলে রানিগঞ্জ – মোড়্গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক করা হয়। বর্তমানে নলহাটি থেকে মোড়গ্রাম ২১ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে সমত লাগে দু’ঘণ্টা।

রাস্তার বেহাল দশায় অতিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই সমস্যায় পড়েছেন এলাকার মানুষ। রাস্তা শুকনো থাকলে ধুলো উড়ে বাড়িতে ঢোকে। আর বর্ষায় রাস্তার মধ্যে এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বাড়ির বাইরে বের হওয়া যায় না। এদিকে গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলি, খোদা বক্সরা বলেন, “আমরা বহুবার রাস্তা অবরোধ করেছি। প্রশাসনের সর্বস্তরে আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই আমরা রাস্তায় ধান গাছ পুঁতে প্রতিবাদ জানালাম।”

জাতীয় সড়কের দায়িত্বে থাকা নিশিকান্ত সিং বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে। তবে এখন প্রাথমিক ভাবে পাথর দিয়ে গর্ত বন্ধের কাজ করা হচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “ওভারলোড বন্ধ না হলে রাস্তা বার বার ভাঙ্গবে। সাধারণ মানুষের উচিত ওভারলোড গাড়ি বন্ধে উদ্যোগী হওয়া। ওভারলোডের কারণে রাস্তা ভাঙ্গছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আমি প্রশাসনের সব দরজায় ঘুরেছি ওভারলোড বন্ধের জন্য। কিন্তু ‘দেখছি’ ছাড়া কোনও আশ্বাস পাইনি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *