প্রাপকের সম্মতিপত্র সহ একাধিক গেরোয় আটকে পশ্চিমবঙ্গে কোভ্যাক্সিনের বণ্টন প্রক্রিয়া

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৪ জানুয়ারি: পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে আসার পর তার পদ্ধতিতে সেভাবে কোনও সমস্যা হয়নি স্বাস্থ্য ভবনের। কিন্তু সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কোভ্যাকসিনের বন্টন আটকে গিয়েছে নিয়মের গেরোয়। শুক্রবার রাজ্যে এসেছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৯৬০ ডোজের টিকা। আর এই টিকার বিশেষত্ব হল, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই টিকা দিতে গেলে প্রাপকের সম্মতি নিতেই হবে। এমনকি কোভ্যাক্সিন পাওয়ার পরে প্রাপক কেমন আছেন নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তা প্রতিনিয়ত জানাতেও হবে। আর সেখানেই আটকে রয়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ টিকার বণ্টন প্রক্রিয়া।

কোভিশিল্ড শহরে আসার সঙ্গেই রাজ্যের সবক’টি জেলায় তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি টিকার প্রোটোকলই বণ্টন প্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গত তিনদিন ধরে আটকে রয়েছে ভারত বায়োটেক এবং আইসিএম‌আরের যৌথ গবেষণায় তৈরি কোভ্যাক্সিন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, কোভিশিল্ড নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। সেই নিয়ম গুলি হল, গত তিনমাসে প্রাপককে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো কোন‌ও গুরুতর অসুখ হয়নি। টিকা দেওয়ার আগে সম্মতিপত্রে প্রাপকের স‌ই বাধ্যতামূলক। প্রাপক স‌ই করতে না জানলে আঙুলের ছাপ প্রয়োজন। প্রত্যেক প্রাপককে টিকা সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য ‘ইনফরমেশন শিট’ দেওয়া হবে। প্রাপক পড়তে না জানলে তা পড়ে শোনাবেন টিকাকরণ আধিকারিক। কোভ্যাক্সিন নিয়ে প্রাপকের কোন‌ও প্রশ্ন থাকলে তা স্পষ্ট করবেন টিকাকরণ আধিকারিক। টিকা নেওয়ার পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নথিভুক্ত করার জন্য প্রাপককে একটি আবেদনপত্র দেওয়া হবে। প্রথম ডোজ পাওয়ার পরবর্তী সাতদিন ধরে প্রতিদিন সেই আবেদন পত্র প্রাপককে পূরণ করতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় আবেদনপত্র টিকাকরণ কেন্দ্রে জমা করতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তির পরে প্রথম ডোজের মতোই প্রাপককে পরবর্তী সাতদিন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য একটি আবেদনপত্রে নথিভুক্ত করতে হবে।

আর এই বিপুল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য যে পরিমাণ স্বাস্থ্য কর্মী বা পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তা রাজ্যের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। শনিবার দিল্লির সঙ্গে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও কনফারেন্স ছিল স্বাস্থ্য ভবনের। বণ্টন প্রক্রিয়ার রূপরেখা রাজ্যগুলির হাতেই ছেড়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের টিকাকরণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কীভাবে বণ্টন‌ প্রক্রিয়ার রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব তা‌ দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। কিন্তু
পদ্ধতিগত এই জটিলতার কারণেই থমকে রয়েছে কোভ্যাক্সিনের বণ্টন প্রক্রিয়া। সেই কারণে কোনোওভাবে এই পদ্ধতি সরলীকরণ করা সম্ভব কি-না, তা চিন্তা ভাবনা করে দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *