
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৬ ফেব্রুয়ারি: মারাত্মক অভিযোগ উঠল শিয়ালদহ এন আর এস হাসপাতালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অ্যানাটমি চিকিৎসক, অধ্যাপক অভিজিৎ ভক্তের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে এক নার্সিং ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে অশালীন মন্তব্য এবং কুপ্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। যদিও এই ঘটনাকে নিজের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন অভিজিৎবাবু।
অভিযোগ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী যখন ওয়ার্ডের ডিউটি করে হোস্টেলে ফিরছিলেন, তখনই ডক্টর অভিজিৎ ভক্ত তাঁর সামনে গাড়ি থামিয়ে তাঁকে গাড়িতে উঠতে বলেন। তারপর গাড়ির মধ্যেই তাঁকে অ্যাপ্রন খুলতে বলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাপ জানতে চান। শুধু তাই নয়, ওই ছাত্রী ব্যক্তিগতভাবে একান্ত সময় দিলে ছাত্রীর উন্নতি হবে, এমন কথাও বলেন। দৃশ্যতই ভয়ানক অস্বস্তিতে পড়ে যান ওই ছাত্রী।
ছাত্রীর আরও অভিযোগ, সেই সময় তাদের কয়েকজন শিক্ষিকা সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের এই কথোপকথন শুনে এগিয়ে আসলে তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, তার কতখানি ক্ষমতা আছে, তা দেখাতে যেন বাধ্য না করায়। এই কথা বলায় তাঁরা চলে যান। এরপরই হোস্টেল সুপারের নাম করে ওই ছাত্রীকে বলেন, সে যদি তাকে খুশি করে, তাহলে কোনও সমস্যা হবে না।
কোনওভাবে পরিস্থিতি বুঝে চিকিৎসকের কথায় সম্মতি দিয়ে কথা ঘুরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন ওই ছাত্রী। এরপরেই ফিরে এসে সিনিয়রদের জানানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই চিকিৎসকের কুকীর্তি ফাঁস করেন ওই ছাত্রী।
প্রসঙ্গত, একসময় ইউনিয়নের দাপুটে নেতা ছিলেন অভিজিৎ ভক্ত। অভিযোগ, সেই সময়েও অনেক ছাত্রী তার লালসার শিকার হয়েছে। কিন্তু লোকলজ্জা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা প্রকাশ্যে আনেনি। বর্তমান মন্ত্রী তথা চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজির সহচর্যে তৃণমূল প্রভাবিত প্রগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও বর্তমানে সভাপতি অভিজিৎ ভক্ত। যদিও এই ঘটনাকে নিজের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিজিৎ বাবু বলেন, ‘সরাসরি না পেরে আমার বিরুদ্ধে এই অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমার চরিত্রে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
যদিও এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে এন আর এস হাসপাতালে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে সার্ভিস ডক্টর ফোরাম, নার্সেস ইউনিটি সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানায়, অধ্যক্ষকে স্মারকলিপিও দেয়। নার্সেস ইউনিটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং নার্সিং ছাত্রীদের কালো ব্যাজ পড়ে ডিউটি করার আবেদন জানানো হয়। এন আর এস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা নার্সিং কলেজের কেউ এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চায়নি।