সংবাদপত্র জগতের আরও এক ঐতিহ্যের অবসান! ‘স্টেটসম্যান হাউস’-এ বানিজ্যিক প্রকল্প

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২৩ নভেম্বর: বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারিভাবে ঘোষণা হল ‘স্টেটসম্যান হাউস’-এ বানিজ্যিক প্রকল্পের কথা। জানি না, এটাকে পূর্ব ভারতের সংবাদপত্র জগতের ওপর আরও এক ধাক্কা বললে কতটা অত্যুক্তি হয়।

১০০ বছর পূর্ণ হয়েছে বাঙালির গর্ব আনন্দবাজার পত্রিকার। আর তিন বছর বাদে দেড়শ বছর পূর্ণ হবে ‘দি স্টেটসম্যান’-এর। ১৮৭৫-এর ১৫ জানুয়ারি এর প্রথম আত্মপ্রকাশ। ‘দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র মুখ্য প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক ছিলেন রবার্ট নাইট। ১৮১৮ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দি ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’। এটি এবং বোম্বেভিত্তিক ‘ইন্ডিয়ান স্টেটসম্যান’-কে মিলিয়ে রবার্ট নাইট শুরু করলেন ‘নিউ ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’। পরে নাম হয় ‘দি স্টেটসম্যান’।

১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরের সময় প্রবল সমালোচনা করেছিল ‘দি স্টেটসম্যান’। লেখা হয়েছিল, “[t]he British have gone to the city of graveyards to be buried there.” ভারতের স্বাধীনতার পরেও এর মালিকানা ছিল ব্রিটিশ বণিকদের হাতে। ষাটের দশকে একটিকনসোর্টিয়ামের হাতে স্থানান্তরিত হয়। এর চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ননী পাল্কিওয়ালা। নয়া মালিকানায় প্রাণ চোপরা হলেন এর প্রথম সম্পাদক।

ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারির (১৯৭৫-’৭৭) কড়া সমালোচনা করেছিল এই পত্রিকা। ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ দৈনিকে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় জোহান হারির নিবন্ধ “Why should I respect these oppressive religions?” এটি প্রকাশ করে দি স্টেটসম্যান। বিবিসি জানায় যে এর জন্য মুসলিমরা দি স্টেটসম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। ফেব্রুয়ারিতে দি স্টেটসম্যানের সম্পাদক রবীন্দ্র কুমার এবং প্রাক্তন প্রকাশক আনন্দ সিনহাকে মুসলমানদের “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

বহু বছর ধরেই নানা কারণে সমস্যা চলছে ‘দি স্টেটসম্যান’-এ। মাঝে অনেক দিন বেতন হয়নি। তাও অধিকাংশ কর্মী দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে গিয়েছেন। নষ্ট হতে দেননি এর ইংরেজি ও বাংলা সংস্করণের মান। দুটো সংস্করণই নিয়মিত অনলাইনে দেখি। মান যথেষ্ঠ ভাল।

এখন এর মালিকানা ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ী আর পি গুপ্তার হাতে। হেরিটেজ-নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়ত ৪, চৌরঙ্গী স্কোয়ারের পুরো ভবনই নিশ্চিহ্ণ হয়ে যেত। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কীভাবে, কতটা নির্মাণকাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে পত্রিকার পরিসর কমতে কমতে নেমে এসেছে মূল ভবনের একতলায় একটা অংশে।

‘দি স্টেটসম্যান’ আছে, থাকবে। স্টেটসম্যান হাউসও থাকবে। কিন্তু হয়ত ঐতিহ্যের অবসান হল।
(সূত্র— উইকিপিডিয়া)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *