বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে শুরু হল পঞ্চম বর্ষ বার্ড ফেস্টিভ্যাল, মহানন্দা অভয়ারণ্যে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে চলেছে দ্বিতীয় পাখি উৎসব

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৬ জানুয়ারি: শুরু হল পঞ্চম বর্ষ বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যাল। রাজ্যের একমাত্র এই পাখি উৎসব চলবে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে কোভিড পরিস্থিতির দরুন বিগত চার বছরের তুলনায় অংশগ্রহণকারী পাখি প্রেমীদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও উৎসাহে সামান্যতম ভাটা পড়েনি। পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের অন্তত তিনটি রাজ্য থেকে ৩৫ জন পাখিপ্রেমীদের নিয়ে এবারের যাত্রা শুরু হল বুধবার। গত বছর চতুর্থ বক্সা পাখি উৎসবে মাত্র আড়াই দিনে বক্সাতে ২১৬ প্রাজাতির পাখির দেখা মিলেছিল। এবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারনা যেহেতু কোভিড পরিস্থিতিতে গত ১২মাসে পরিবেশ অনেকটাই স্বচ্ছ, তাই স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় পাখি পরিযায়ী পাখিদের বেশি করে দেখা মিলতে পারে।

এদিন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া প্রকৃতি পর্যবেক্ষন কেন্দ্রে পঞ্চম বর্ষ বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যালের সূচনা করেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল(বন্যপ্রান) বিনোদ কুমার যাদব, উত্তরবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনবিভাগের ডিএফও।উপস্থিত ছিলেন বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যালের যিনি সূচনা করেছিলেন, সেই আধিকারিক উজ্জ্বল ঘোষ। এছারাও অনিমেশ বসু সহ রাজ্যের বন ও বন্যপ্রাণের সঙ্গে জড়িত গবেষক, সংরক্ষক, প্রকৃতি প্রেমিরা। এবারই প্রথম উৎসবে অংশ নিয়েছেন যারা তাদের প্রত্যেকের জন্য পৃথক টেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বক্সায় পাখিদের বৈচিত্র্য গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ২০১৭ সালে বার্ড ফেস্টিভ্যালের সূচনা হয়।মূলত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতর পাহাড় থেকে সমতল, জলাভূমি নিয়ে পৃথক ৫টি রুট তৈরি করা হয় গভীর জঙ্গলে।উৎসবে অংশ নিয়েছেন যারা তাদের পালা করে বিভিন্ন দলে ভাগ করে রুটগুলিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলবে পর্যবেক্ষণ।

বিনোদ কুমার যাদব বলেন,”দেশের মধ্যে বক্সা এমন একটা ব্যাঘ্র প্রকল্প যেখানে সারা বছরে ৫৪০টি প্রজাতির পাখি দেখা যায়।দেশের কোনও ব্যাঘ্র প্রকল্পতে এমন নজির নেই।” শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, আশা করছি এবারও তিনদিন পাখি পর্যবেক্ষণের পর আমাদের বক্সার চেকলিস্ট আর সমৃদ্ধ হবে।” অনিমেশ বসু বলেন,”খুবই তাতপর্যপূর্ণ উৎসব। শুধু পাখি দেখা, চেনা নয় উৎসবে ৮টি পৃথক টেকনিক্যাল সেশান থাকছে।সংরক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থাকবে।”

গবেষক বিভু প্রকাশ জানান, “বক্সায় যতটা সহজে বিভিন্ন শিকারি প্রজাতির পাখি দেখা যায় তেমনটা অন্য কোথাও লক্ষ্য করা যায়না।”

এদিকে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এদিন বনবিভাগ থেকে করা হয়েছে। বিনোদ কুমার যাদব বলেন, বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যাল আজ ৫ বছর পর নিজস্ব পরিচিতি পেয়েছে। এই উৎসবের সাফল্য দেখে আমাদের কাছে আবেদন এসেছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত প্রথম মহানন্দা বার্ড ফেস্টিভ্যাল শুরু হচ্ছে মহানন্দা অভয়ারণ্যে। পাশাপাশি বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যালের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি ফের রাজাভাতখাওয়া থেকে মুক্ত আকাশে দুই প্রজাতির মোট ১০টি বিলুপ্তপ্রায় শকুন ছাড়া হবে। যার মধ্যে থাকছে দুটি হোয়াইট ব্যাকড ভালচার। তাদের প্রত্যকের সঙ্গে অত্যাধুনিক ট্রান্সমিটার লাগানো থাকবে। বাকি ৮টি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনের দেহে ট্যাগ লাগানো থাকবে। শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, খুব দ্রুত বার্ড অফ বক্সা নামে একটি বই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে বার করা হবে। নতুন প্রজাতির পাখির দেখা মিলতে পারে এই আশা করছেন অনেকেই পাখি উৎসবে।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here