রাজেন রায়, কলকাতা, ১১ সেপ্টেম্বর: কথায় আছে ভাগ্যের পরিহাস! সেইরকম ঘটনা এবার ঘটতে দেখা গেল। জামাইবাবু রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অথচ কষ্টের জীবন এখন ইরা দেবীর।
কে এই ইরাদেবী? ইরাদেবী খড়দহের একটি নামী উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষিকা। বাংলা তো বটেই, ঝরঝরে ইংরেজিতেও কথা বলেন। স্কুলে দরকারে দুটি ভাষাতেই পড়াতেন। এ হেন মানুষটি এখন মানসিক স্থিতি খুইয়ে পথবাসী। ঠিকানা, উত্তর শহরতলির বরানগরের ফুটপাথ। ঘটনা হল, ইরাদেবীর আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সহধর্মিনী মীরা ভট্টাচার্যের বোন। মানে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা।ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইরাদেবীকে নিয়ে আলোচনা দানা বেঁধেছে।
শিক্ষিকার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ঠিক কী হয়েছিল, সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা স্পষ্ট মনেও করতে পারেন না। কীভাবে সুখী জীবন থেকে ফুটপাথে ঠাঁই হল, সে বৃত্তান্তও বিস্মৃত হয়েছেন। মানসিক ভারসাম্য খানিকটা টলে গেলেও আত্মসম্মানজ্ঞান কিন্তু টনটনে। কারও থেকে চেয়ে খান না, রীতিমতো পয়সা দিয়ে খাবার কেনেন।
ডানলপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি এটিএম। সেখানেই ছোট্ট প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে ইরা বসুর আস্তানা। সেখানেই দিন কেটে রাত আসে। প্রাক্তন শিক্ষিকার জীবনে এতটুকু আশার আলোর রেখা দেখা যায় না। বৃদ্ধাকে ডানলপ এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। মাথার উস্কোখুস্কো চুল কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা।
এদিন বিকেলে বরানগর থানা থেকে পুলিশ আসে। সঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতা কর্মীরা। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর তাঁকে কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যাওয়ার আগে পইপই করে পাখি পড়ানোর মতো করে পুলিশ ও সিপিএম কর্মীদের উনি বলেছেন, “মানুষটা অর্থৎ “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য” অসুস্থ। ওঁকে বিরক্ত করবেন না। উনি যেন এ সব জানতে না পারেন।” যদিও এখন তার ঠিকানা রাস্তাই।
অনেকের প্রশ্ন ছিল ইরাদেবী সত্যিই কি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা তথা মীরা ভট্টাচার্যের বোন? কেন তার এমন অবস্থা হল? সে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্বয়ং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। মীরা ভট্টাচার্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বোন স্বেচ্ছায় এই জীবন বেছে নিয়েছে। ওঁর কোনও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা নেই। চাইলেই নিজের বাড়িতে ফিরে বসবাস করতে পারে। ওঁর নিজস্ব বাড়ি আছে। ঠিকানা বিবি ৮৪ সল্টলেক, কলকাতা। এক সময় এই বাড়িতে পুলিশি পাহারাও ছিল। পাশাপাশি মীরা দেবী ক্ষোভের প্রকাশ করে লিখেছেন, ইরা পরিবারের কারও কথা কোনও দিন শোনেননি। নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করেছেন। এই আচরণের জন্য উনি পরিবারের সকলকে অসম্মানিত করছেন। ইরাদেবী মেধাবী ও শিক্ষিতা। দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন খড়দহ প্রিয়নাথ স্কুলে। বাংলা তো বটেই, ঝরঝরে ইংরেজিতেও কথা বলেন। স্কুলে দরকারে দুটি ভাষাতেই পড়াতেন।