
পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ মার্চ: বাঁকুড়া সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলাগুলির জঙ্গলে লাগানো হবে লাল ও শ্বেত চন্দন। তার জন্য চারা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বন দফতর। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সেই কাজ শুরু হবে। চারা রোপনের জন্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানালেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে নিয়ে ‘বন বান্ধব উৎসব’ পালিত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপগড় ইকোপার্কে।সেখানেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইঞা সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, বনদপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিক, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক ও পুলিশ সুপার।
গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য এই উৎসব পালিত হয়নি। আগে প্রতিটি জেলায় এই উৎসব পালিত হত। কিন্তু এবার দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাগুলিকে নিয়ে একটি ‘বন বান্ধব উৎসব’ হল রবিবার। যার উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই উৎসব মঞ্চ থেকে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করা হয়। রাজ্যের ৫০ জন জঙ্গলমহলের কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে দু’বছর পাবে তারা। পাশাপাশি ৪২ কোটি ৬১ লক্ষ ৫৪ হাজার ১১২ টাকা জঙ্গলের লভ্যাংশ তুলে দেওয়া হয় বন সুরক্ষা কমিটিগুলির হাতে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, “আগে ২৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ দেওয়া হত, বর্তমান সরকার ৪০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিচ্ছে। তারা যাতে আরও ভালোভাবে জঙ্গল রক্ষার দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হন তার জন্য নানা পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। ৩২০০০ মানুষকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে৷” এদিন তিনি ঘোষণা করেন, “এবার দক্ষিণবঙ্গেও চাষ হবে লাল ও শ্বেত চন্দনের। তার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫০০০, ঝাড়গ্রামে ৬০০০ শ্বেত চন্দন এবং লাল চন্দনের ১০০০০ করে চারা তৈরি করা হবে। দক্ষিণবঙ্গে ৬৫০০০ করে চারা তৈরি করা হবে।দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলকে এজন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এই গাছ দুর্মুল্য, এর দ্বারা বন সুরক্ষা কমিটি সহ জঙ্গলমহলের মানুষের আর্থিক ভাবে দারুন উন্নতি
হবে ৷”
মন্ত্রী এদিন গাছ কাটা নিয়ে মঞ্চ থেকেই কড়া নির্দেশ দেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের৷ তিনি বলেন, “বারবার জেলার গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা এলাকা থেকে গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ আসছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গলে আগুন লাগানোর অভিযোগ পাচ্ছি৷ সেটা পরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে৷ আমরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে নির্দেশ দিচ্ছি৷ আরও কড়া হাতে তা দমন করতে হবে৷ সেই সঙ্গে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি বিধানসভাতে কড়া আইন আনতে, যাতে গাছ কাটা ও জঙ্গলে আগুন লাগানোর ক্ষেত্রে কড়া ব্যাবস্থা নেওয়া যায়৷”
তিনি আরও জানান, “দফতরের অফিসগুলিতে বনকর্মীর সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় এক হাজার ফরেস্ট গার্ড নিয়োগ এবং বিভিন্ন রেঞ্জ অফিসগুলিতে বাইক দেওয়ার পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।সেই সাথে ভালো কাজ করলে বনকর্মীদের এবার পুরষ্কার দিয়ে সম্মনিত করা হবে৷” সেই সঙ্গে জেলাতে হাতির উপদ্রব সমস্যা মেটাতে বেশ কয়েকটি নতুন পদক্ষেপের কথা জানান মন্ত্রী৷
তিনি বলেন, “হাতির হানা রুখতে করিডর তৈরি হবে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাতে। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গেও হাতির করিডর তৈরি করা হচ্ছে। তার জন্য কেন্দ্র ৪০ শতাংশ, রাজ্য ৬০ শতাংশ খরচ করবে। জঙ্গলমহলে যে দলছুট হাতিগুলি প্রায় লোকালয়ে দিনের আলোয় প্রবেশ করে যাচ্ছে। যাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না বনদপ্তর, সেই হাতিগুলিকে ট্রাঙ্কুলাইজার করা হবে। এমন দশটি হাতির ট্রাঙ্কুলাইজার করার জন্য কেন্দ্রের থেকে অনুমতি মিলেছে। তার মধ্যে তিনটি হাতির ট্রাঙ্কুলাইজার হয়েছে। হাতির জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়েছে।”