
আমাদের ভারত, ২৪ মে: ব্রিটিশ রাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে সেঙ্গেল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই সোনার রাজদণ্ড ন্যায় বিচারের প্রতীক সেঙ্গেল নতুন সংসদ ভবনে জায়গা পাচ্ছে।
নতুন সংসদ ভাবনের ঐতিহাসিক সোনার রাজদণ্ড সেঙ্গেল এনে রাখা হবে। আগামী রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে লোকসভার স্পিকারের আসনের কাছে এই রাজদণ্ডকে বসাতে দেখা যাবে নরেন্দ্র মোদীকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন। ব্রিটিশ রাজ থেকে মুক্তি এবং ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জহরলাল নেহেরুর হাতে এই রাজদন্ড তুলে দেওয়া হয়েছিল।
তামিল শব্দ সেম্মাই থেকে সেঙ্গেলের উৎপত্তি, এর অর্থ ন্যায়। তবে সেঙ্গেলের ইতিহাস অনেকেরই আজানা। ইংরেজ শাসিত ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন নেহেরুকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন তার ফলেই এই সেঙ্গেলের আগমন ঘটে। মাউন্টব্যাটেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করলে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক কি হবে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে নেহেরু তখন দেশের শেষ গভর্নর জেনারেল পি রাজা গোপালাচারীর দ্বারস্থ হন। যিনি রাজাজি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি নেহেরুকে তামিলনাড়ুর রাজ পরিবারের ঐতিহ্যের বিষয় জানান। সে রাজ্যের রাজ পরিবারের নতুন রাজার অভিষেকের সময় হাতে রাজদণ্ড তুলে দেওয়া হয়, যা চোল রাজাদের শাসন কাল থেকে চলে আসছিল। সেই প্রথা মেনেই নেহেরুকে ব্রিটিশদের হাত থেকে রাজদণ্ড নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজাজি।
রাজা গোপালাচারীর পরামর্শকে মেনে সেই ঐতিহাসিক রাজদণ্ড তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। তিনি রাজাজীকেই সব দায়িত্ব দেন।
এরপর তামিলনাড়ুর মাঠ তিরু ভাদুথুরাই আথিনামের নামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজা গোপালাচারী। মঠের তৎকালীন গুরু সেঙ্গেল তৈরি করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আবার এই রাজদণ্ড তৈরীর দায়িত্ব তুলে দেন তৎকালীন মাদ্রাজের এক জহুরি ভুমিদি বঙ্গারু চেট্টার হাতে তুলে দেন।
বঙ্গারু সোনা রাজদন্ড তৈরি করেছিলেন। ৫ ফুট উঁচু সেন্ডেলের মাথায় রয়েছে নন্দী ষাঁড় যা ন্যায় বিচারের প্রতীক।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী সেঙ্গেল তৈরি করার পর বঙ্গারু সেই রাজদণ্ড দেন মঠের এক প্রবীণ পুরোহিতের হাতে। তিনি সেটা আবার তুলে দেন মাউন্ট ব্যাটেনের হাতে।
এরপর রাজদন্ডটি মাউন্ট ব্যাটেনের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।গঙ্গাজল ছিটিয়ে সেটা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নেহেরুর কাছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতের মিনিট ১৫ আগে সেঙ্গেল নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়। নেহেরু রাজদণ্ড গ্রহণ করার মুহূর্তের কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ গান রচনা করিয়ছছিলেন যা ওই সময় পরিবেশিত হয়েছিল।
সেঙ্গেল বর্তমানে এলাহাবাদের একটি জাদুঘরে রয়েছে। সেখান থেকে রবিবার দিল্লিতে সংসদ ভবনে আনা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেঙ্গেলের ইতিহাস এবং তাৎপর্য অনেকেরই অজানা। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত করতেই সেঙ্গেল নতুন সংসদ ভবনে এনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।