আগুনে বিলীন নয়, বীর যোদ্ধা রাজেশ শায়িত থাকবেন গ্রামেই

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ১৮ জুন: আগুনে বিলীন নয়, গ্রামের বীর যোদ্ধার পার্থিব শরীর শায়িত করা হবে গ্রামের মধ্যেই। সেই মতো গ্রামেই তৈরি করা হচ্ছে শহিদ বেদি। ইতিমধ্যে সেখানে মাটি কেটে রাখা হয়েছে। সেই জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন এক ব্রাহ্মণ পরিবার। শুক্রবার সকালেই পানাগড় থেকে শহিদ জওয়ানের কফিন বন্দি দেহ পোঁছে যাবে বীরভূমের মহম্মদ বাজার থানার বেলেগড়িয়া গ্রামে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের ছেলে বীর যোদ্ধা রাজেশ ওঁরাওয়ের শহিদ হওয়ার খবর পরিবারকে দেয় সেনাবাহিনী। ওইদিন ভোরের দিকে লাদাখে দুই দেশের সেনা যুদ্ধে আহত হন রাজেশ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। শোকস্তব্ধ বীরভূম। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তাঁর কফিনবন্দি শরীর গ্রামে ফেরার কথা ছিল। সেই মতো গোটা গ্রামে ছিল অরন্ধন। শুধু গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা হয়। সেখানেই গ্রামবাসীরা খাওয়াদাওয়া সারেন।

বিকেলের দিকে সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়, সন্ধ্যার দিকে পানাগড় এয়ারফোর্স মাঠে রাজেশের দেহ আসবে। শুক্রবার সকালে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ। এদিকে বীর যোদ্ধাকে শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে জেলার বহু মানুষ গ্রামে ভিড় জমিয়েছিলেন। হাতে হাতে উড়েছে জাতীয় পতাকা। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে গাড়ি। গাড়ির সামনে ও মাথার উপর রয়েছে রাজেশের ছবি। গোটা গ্রামে বাঁশের বেড়া দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে গ্রামে এবং গ্রামে ঢোকার রাস্তায়।
করোনা আবহে যাতে গোষ্ঠী সংক্রমণ না ঘটে তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু দেহ আসার পর কতটা সামাজিক দুরত্ব থাকে তা নিয়ে সন্দিহান সকলে।

এদিকে এদিন সকাল থেকে রাজেশের গ্রামে যান কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ, সাঁইথিয়ার বিধায়ক নীলাবতী সাহা। সকলে সমবেদনা জানান। এদিকে ছেলের দেহ আগুনে বিলীন করতে চান না পরিবার। চান না গ্রামবাসীরাও। সকলেই চান রাজেশের দেহ শায়িত থাক গ্রামেই। তাই জ্যেঠু গোপীনাথ ওঁরাও গ্রামের মধ্যেই নিজের জায়গায় শহিদবেদি করার জন্য দেন। এদিন দেহ আসবে ধরে নিয়ে বেদির কাজ শেষ পর্যায়ে। জ্যেঠু বলেন, “বাড়ির ছেলে গ্রামেই থাক। তাই আগুনে দেহ বিলীন না করে গ্রামেই শায়িত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্তে এক মত সকলেই”।

রাজেশের খুড়তুতো ভাই অভিজিৎ ওঁরাও সন্ধ্যায় জানান, সেনাবাহিনীর অফিস থেকে ফোন করে জানানো হয় দেহ শুক্রবার সকালে পাঠানো হবে। এই খবর পেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত মানুষ ফিরে যেতে থাকেন। তবে জানা গিয়েছে রাজেশের কফিনবন্দি দেহের সঙ্গে পানাগর থেকে মহম্মদ বাজারের বাড়িতে আসবেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র খাঁ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *