পুলওয়ামা হামলার পুনরাবৃত্তি রুখল যৌথবাহিনী, বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে নাশকতার ছক বানচাল

চিন্ময় ভট্টাচার্য, আমাদের ভারত, ২৮ মে: সেনা ও পুলিশের তৎপরতায় বানচাল হল গত বছরের পুলওয়ামা হামলার পুনরাবৃত্তি। রাজপোরার আয়েনগুন্ড এলাকায় ২০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি আটকে দিল যৌবাহিনী। কাশ্মীর পুলিশের আইজিপি বিজয় কুমার জানিয়েছেন, পুলওয়ামা পুলিশ, সিআরপিএফ, সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সময়মতো বিস্ফোরণের ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বিজয় কুমার জানান, কেবল জইশ নয়, হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি সংগঠনও এই হামলায় সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘‌আমরা জানতে পেরেছিলাম জইশ–ই–মহম্মদের এক জঙ্গি হামলা চালাতে চাইছে। তাই আমরা সন্দেহ করেছিলাম আইইডি–বোঝাই গাড়িটা যে চালাচ্ছিল হিজবুল মুজাহিদিনের সেই জঙ্গি আদিল যোগাযোগ রেখেছিল জঈশ–ই–মহম্মদের সঙ্গেও। আদিল নিরাপত্তা বাহিনীদের গাড়িকে নিশানা করেছিল। আমরা বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ দলও আনাচ্ছি। এই নাশকতার ছকের পিছনে জইশের মুখ্য ভূমিকা ছিল। হিজবুল মুজাহিদিনও তাদের সহযোগিতা করেছিল।’‌

আইজির আরও অনুমান, ওই গাড়িতে ২০ কেজি নয়, প্রায় ৪০–৪৫ কেজি বিস্ফোরক ছিল। আর গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারির মতো এবার বাহিনীর গাড়িই নাশকতার লক্ষ্য ছিল। তবে গোয়েন্দা সূত্রে আগাম খবর পেয়েই তাঁরা তৎপর হয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন আইজি বিজয় কুমার।

কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একজন সন্ত্রাসবাদী বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি নিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটাতে এলাকায় ঢুকেছে বলে বুধবার রাতেই গোপন সূত্রে খবর পায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় তল্লাশি অভিযানে নামে সেনা, পুলিশ এবং আধাসেনার জওয়ানরা। যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, তার একটা রুটম্যাপ বানিয়ে, কয়েকটি দল গঠন করে কাজে লেগে পড়েন জওয়ানরা।

এরপর গভীর রাতে পুলওয়ামার রাজাপোরার আয়েনগুন্ড এলাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা একটি সাদা রঙের হুন্ডাই স্যান্ট্রো গাড়ির পথ আটকালে চালক ব্যারিকেড ভেঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করে। লক্ষ্য ছিল, বিস্ফোরক ভর্তি গাড়িটি কোথাও আঘাত করে বিস্ফোরণ ঘটানো। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় সেই চেষ্টা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে চালককে ধরা যায়নি। সে গাড়ি ফেলে রেখে পালায়। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ির পেছনের সিট থেকে ড্রাম বোঝাই ২০ কেজি আইইডি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। গত বছরের পুলওয়ামা হামলায় এই বিস্ফোরকই ব্যবহৃত হয়েছিল।

এরপর বম্ব স্কোয়াডের নিরীক্ষণে পরিত্যক্ত জায়গায় গাড়িটিকে নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নাশকতার আগাম খবর পেয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় স্থানীয়দের আগেই নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছিল। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। গাড়িটি কোথা থেকে এসেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। গাড়িতে যে নম্বরপ্লেট লাগানো ছিল, সেটি ভুয়ো বলে তদন্তের পর জানিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতেই সিআরপিএফ কনভয়ে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা চালানো হয়। শহিদ হন ৪০ জন জওয়ান। এই হামলার পিছনে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ যুক্ত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *