“মুখ্যমন্ত্রী অমর্ত্য সেনের হাতে জমির যে নথি তুলে দিয়েছেন তার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই, ওই নথি মানব না,” বললেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ৩১ জানুয়ারি: ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় অমর্ত্য সেনের হাতে জমির যে নথি তুলে দিয়েছেন তার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। সেই নথি মানব না’, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তাঁর একরোখা অবস্থানের কোনও পরিবর্তন ঘটাননি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অর্থাৎ অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে নিজেদের অবস্থানেই অনড় বিশ্বভারতী। সোমবারের পর মঙ্গলবারও বোলপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের সময়কালে অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে অব্যাহত রয়েছে তরজা।

গত সোমবার বীরভূমে পা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন অমর্ত্য সেনের বাড়ি। হাতে ছিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের জমির রাজ্য ভূমি দপ্তরের নথি। কারণ দিন কয়েক আগে শান্তিনিকেতনের বাড়িতে পা দিতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ফের চিঠি পাঠায় অমর্ত্য সেনকে। গত ২৪ জানুয়ারি পাঠানো সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৪৩ সালের ২৭ অক্টোবর প্রয়াত আশুতোষ সেনকে (অমর্ত্য সেনের বাবা) সুরুল মৌজার অন্তর্গত একটি জমি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। সেই জমির পরিমাণ ১.২৫ একর। কিন্তু বর্তমানে অমর্ত্য সেন ১.৩৮ একর জমি ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ ১৩ ডেসিবেল জমি অতিরিক্ত দখল হয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি, চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের আইনজীবীর উপস্থিতিতে যৌথভাবে জমি জরিপ করতে প্রস্তুত। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি ফের বিশ্বভারতীর তরফে অমর্ত্য সেনকে আরও একদফা চিঠি পাঠানো হয়েছে। জমি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সহযোগে পাঠানো সেই চিঠিতে অমর্ত্য সেনের জমির দখল করা অংশ অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেরও কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড়া পড়েছে চারিদিকে। সেই সুযোগে অমর্ত্য সেনের পক্ষ নিয়ে নিজের উপাচার্য বিরোধী অবস্থান প্রকারান্তরে বিজেপি বিরোধী অবস্থান বিশ্বাসযোগ্য করাতে হাতে নথি নিয়ে অমর্ত্য সেনের বাড়ি গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের। অমর্ত্য সেনকে যে ভাবে অপমান করা হয়েছে তা আমার গায়ে লেগেছে। তাঁর জমির রেকর্ড তাঁর হাতে তুলে দিয়েছি। আইনত আমরা কি করব তা ফিরে গিয়ে জানাবো। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

মুখ্যমন্ত্রীর জবাব দিতে এবার মুখর হয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্যও। এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে উপাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া কাগজের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। রাজ্যে কীভাবে কাগজ তৈরি হয় তার অজস্র উদাহরণ আমাদের জানা আছে। তা করতে গিয়ে জেলারই একজন (অনুব্রত) জেলে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে নথি দেখাচ্ছেন তাতে আশুতোষ সেনকে ইজারা দেওয়ার তথ্য আছে। কিন্তু ২০০৬ সালে বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনের নামে যে মিউটেশন করে দিয়েছিল তাতে জমির পরিমাণ ১.২৫ একর। অমর্ত্য সেনও তা ভাল করেই জানেন। এই নিয়ে বিতর্ক বহুদিন ধরেই চলছে। শুধু অমর্ত্য সেন নয়, এমন বহু তাবড় তাবড় লোক বিশ্বভারতীর জমি বেদখল করে আছে। পরিমাণ ৬২ একর। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, জমি জরিপ করা হোক। তাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকুন অথবা তাঁর স্তাবকদের পাঠান।”

অমর্ত্য সেনকে ব্যবহার করে মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দ্বৈরথ যে অব্যাহতই থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর তারই ইঙ্গিত দিয়েছে। যা মান্যতা দিয়েছে অমর্ত্য সেনের সেই মন্তব্যকে যা তিনি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের হাত থেকে জমির নথি নেওয়ার পরই। অমর্ত্য সেন স্পষ্ট বলেছিলেন, “এই নথি পাওয়া মানে জমি বিতর্ক যে একেবারে উবে গেল মনে করি না। কারণ যারা এই বিষয় নিয়ে বিচলিত, যারা আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে চান, তাদের উদ্দেশ্য তো আরও বড়। তারমধ্যে কিছু রাজনীতি আছে। কিছু সমাজনীতি আছে। তাদের সাথে আমার রাজনীতিক মতাদর্শগত পার্থক্য আছে। আমি যেমন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি পছন্দ করি। রবীন্দ্রনাথও তা করতেন। যারা প্রধানত সাম্প্রদ্রায়িক রাজনীতি করেন তাদের পক্ষে এটা খুব একটা বাঞ্চনীয় ব্যবস্থা নয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *