
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১২ ফেব্রুয়ারি: সিঁথি কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তিনজন পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে। এর মধ্যেই আচমকা নিখোঁজ হয়ে গেলেন থানায় পুলিশের কীর্তির একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আসুরা বিবি। রাজকুমারকে নিয়ে এসে মারধর করা হয়েছিল, তা একমাত্র সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি হাইকোর্টে। প্যাঁচে পড়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছে পুলিশ, এমনটাই দাবি পরিবারের।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বেরোন আসুরা। কিন্তু তারপর থেকে আর তাঁর কোনও খোঁজ নেই। পুলিশ প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে এই মামলার সিআইডি তদন্ত হোক দাবি তুলেছে পরিবার।
( মৃতের ছেলে)
জানা গিয়েছে, এগারো মাস আগে আশুরা বিবি ৫ শিশু সন্তানকে নিয়ে পাইকপাড়ার রাত্রিবাসে এসে ওঠেন। এখন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আশুরা বিবি। স্বামী রিকশাচালক। আর আশুরা বিবি নিজে কাগজ কুড়িয়ে দিন গুজরান করেন।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ সিঁথি থানার ২ পুলিশকর্মী রাত্রিবাসে আসেন ও তাঁকে থানায় নিয়ে যান। তারপর রাত ১০টা নাগাদ রাত্রিবাসে ফেরত আসেন আসুরা। এরপর মঙ্গলবার সকালে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বের হন আশুরা বিবি। কিন্তু তারপর থেকে আর তাঁর কোনও খোঁজ নেই।
আবাসিকদের কথায়, সোমবার রাতে শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে ফেরেন আশুরা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে আশুরা বিবি জানান, থানায় তাঁকে আর রাজকুমার বেধড়ক পেটানো হয়েছে। ইলেক্ট্রিকের ডান্ডা দিয়ে মারা হয়েছে। স্থানীয় এক প্রোমোটার প্রদীপ পালের বহুতল থেকে বাথরুম ফিটিংসের কিছু জিনিসপত্র চুরি গিয়েছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের তুলে এনে থানায় পেটাচ্ছে। কাগজকুড়ানি হলেও আশুরা বিবির কোনওদিন চুরির স্বভাব ছিল না বলে দাবি করেছেন আবাসিকরা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, যে অভিযোগে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল, তাও সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, আসুরা বিবির কাছ থেকে চোরাই মাল কেনার অভিযোগে সোমবার দুপুরে বাড়ি থেকে রাজকুমার সাউকে তুলে নিয়ে যায় সিঁথি থানার পুলিশ। অভিযোগ, তারপর থানার লকআপে মারধরের চোটে মৃত্যু হয় রাজকুমার সাউয়ের। সেই ঘটনা ঘিরে সোমবার রাত থেকে তোলপাড় সব মহল। সেদিনের ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আসুরা বিবি। তিনি আদালতে স্পষ্ট বলেছিলেন, “দাস বাবু (এসআই সৌমেন্দ্রনাথ দাস) আমাকে জোর করে চোর অপবাদ দিয়ে বয়ান লিখতে বলে। রাজকুমারের নাম বলতে বলে। না করলে ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই সিঁথি থানার ঘটনায় তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা। তদন্তের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত কমিশনার দময়ন্তী সেন। কিন্তু মামলার প্রধান সাক্ষী আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় তোলপাড় বিভিন্ন মহলে।