জে মাহাতো, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে এক হিন্দু মহিলার মৃত্যুর ন্যায় বিচার চেয়ে সম্প্রীতির নজির গড়ল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দাঁতন ব্লকের ব্রাহ্মণ খলিশা গ্রামে এক হিন্দু মহিলার মৃত্যুর ন্যায় বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা পথে নেমেছেন।
এক মহিলার রহস্যমৃত্যুর পর দীর্ঘ ছয়মাস কেটে গেলেও অধরা রয়েছে অভিযুক্তরা ল। তাই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বেলদা থানার দাঁতন ২ ব্লকের ব্রাহ্মণ খলিসা গ্রামে গত বছরের ১০ জুন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল গৃহবধূ ছবি জানার। মহিলাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। সেই রিপোর্টে মহিলার শরীরের ৯৫ শতাংশ পোড়া বলেই উল্লেখ রয়েছে।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, মহিলার স্বামী দুলাল প্রতিবন্ধী।মৃতার ভাসুরের ছেলে ও কয়েকজনের নামে মহিলাকে অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে ‘খুন’ করার অভিযোগ তুলে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানান গ্রামবাসীরাই। অভিযোগের সাত মাস পরেও অভিযুক্তরা ধরা পড়ল না কেন এই প্রশ্ন তুলে বুধবার প্রতিবাদ জানালেন তারা। অভিযোগ, মৃত ছবি জানার স্বামী দুলাল জানা মূক ও বধির হওয়ায় তাকে জোর করে এলাকা ছাড়া করেছে তার দাদার ছেলে-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, ব্রাহ্মণ খলিসা গ্রামের এক প্রান্তে ছবি জানা স্বামী ও এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। স্বামী প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব ছিল স্ত্রী ছবির ওপর। গ্রামের শিব মন্দির চত্বর এলাকার চারপাশে সংখ্যালঘু পরিবারের বাস। মন্দিরের পাশেই ছবি জানার বাড়ি। সংখ্যালঘু মানুষরাই ছবি জানার মৃত্যুর পর পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে।অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে তারা প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, ছবি জানার স্বামী দুলালের দাদার ছেলে ও অন্যান্যরা মহিলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খুন করেছে। তাদের সম্পত্তি হস্তগত করার জন্য। বাকিদের গ্রামছাড়া করা হয়েছে। ঘটনার পর গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে চারজনের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানালেও এ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে প্রতিবাদী মঞ্চটি। মঙ্গলবার মৃতার বাড়ির সামনে সঠিক বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ জানান গ্রামের মানুষ। এলাকার বাসিন্দা শেখ আসগার বলেন,” ছবি জানাকে খুন করার পর তার স্বামী ও দুই সন্তানকে তাড়িয়ে দিয়েছে অভিযুক্তরা। আমরা চাই দুলাল জানা যেন গ্রামে তার বাড়িতে এসে থাকতে পারে। তার স্ত্রীর মৃত্যুতে অভিযুক্তদের পুলিশ দ্রুত ধরুক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
অপর এক বাসিন্দা সেক মহম্মদ সিরাজুল হকের বক্তব্য, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আমরা এখানে বসবাস করি। এই ঘটনায় দোষীরা যেন শাস্তি পায়। পরিবারটি যাতে সুবিচার পায় সেই লক্ষ্যেই আমরা একত্রিত হয়েছি।”
এর আগেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এলাকায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। বেলদার এসডিপিও সামিম বিশ্বাস জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
