এই সংকটের মধ্য থেকেই উত্থান হবে নতুন ভারতের, কলকাতায় বললেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত

আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর: এই সংকটের মধ্য থেকেই নতুন ভারতের উত্থান হবে, একথা বললেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সংঘের দুদিনের কার্যকারিনী বৈঠকে তিনি কর্মকর্তাদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অনেকে বলেছিল সংক্রমনের থেকে খাদ্যসংকটে বেশি মানুষ মারা যাবে কিন্তু এরকম ঘটেনি। পাশাপাশি তিনি বলেন একটা যুগোপযোগী অর্থনীতি রচনা করতে হবে এবং আগামী দিনে স্বদেশীর ওপর জোর দিতে হবে।

দু’দিনের বৈঠকে মোহন ভাগবত বলেন, রাষ্ট্র নির্মাণের যে কাজ চলছে তার পরের চরণ শুরু হয়েছে। “New Normal” স্বদেশী – নতুন ভারতের উত্থান এই সংকট কাল থেকেই শুরু হবে। এই শিক্ষা ও বোধ নিয়ে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। কোবিড -১৯ সংক্রমণ শুরুর সময় কিছু কিছু ব্যাক্তি বলেছিলেন যে সংক্রমণ থেকে বেশী মানুষ মারা যাবে খাদ্য সংকটে। এরকম ঘটনা কিন্তু হয়নি।

তিনি বলেন, মহামারী একদিন চলে যাবে। তখন আমাদের রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণের কাজ করতে হবে, এই মহামারীর থেকে শিক্ষা নিয়েই করতে হবে। একটা যুগোপযোগী অর্থনীতি আমাদের রচনা করতে হবে। তিনি আশাপ্রকাশ করন, বিজ্ঞান ও দর্শনকে সামনে রেখে প্রশাসন একটা সঠিক রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থা তৈরি করবে। সেই ব্যবস্থাকে যথার্থ করে তোলার জন্য প্রশাসনকে সমাজ সহায়তা করবে। বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমানো বার্তা দিয়ে বলেন, বিদেশের উপর আর বেশি নির্ভর করা যাবে না। স্বদেশী আচরণের মন তৈরি করে নিতে হবে। স্বদেশী উৎপাদনের উপর জোর দিতে হবে। আত্মনির্ভরশীলতাই হবে আগামী উন্নয়নের মূল বার্তা।

বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ছোট সংখ্যায় ক্লাস এবং বৈদ্যুতিন বা ই -ক্লাসরুমের উপর জোর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি শরীরচর্চায় প্রাণায়াম, যোগ পদ্ধতি যুক্ত করা আবশ্যিক বলে জানান। শুধু তাই নয়, সকলকেই এই শরীরচর্চায় সামিল করে তোলার ওপর জোর দেন।

সংঘ প্রধান বলেন, এই মহামারী এবং মানুষের আবদ্ধ জীবন প্রাকৃতিক পরিবেশকে অনেকটাই শুদ্ধ করেছে। পরবর্তী জীবনে আমাদের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যা পরিবেশবান্ধব, চিরায়ত হয়। এর জন্য জল ও বৃক্ষ সংরক্ষণ, জৈবকৃষি, গোরক্ষা, প্লাস্টিক-মুক্তি প্রভৃতি দিকে বেশি নজর দেব।

রাম মন্দিরের শিলান্যাসের পর সমস্ত হিন্দুদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। মন্দির নির্মাণে সকল রকম সহায়তা করার জন্য তৈরি হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় সব গ্রামের মাটি পৌঁছাবে।

স্বয়ংসেবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজে ভালো হওয়া ও দুনিয়াকে ভালো করা আমাদের কাজ। এই মুহূর্তে আমাদের কার্যক্রম হল সেবা। সেবার মধ্যে দিয়েই এই নীতিটি পালিত হচ্ছে “একান্তমে আত্মসাধনা/লোকান্তমে পরোপকার” — এটা সঙ্ঘের লক্ষ্য। একান্তে আত্ম সাধনা এবং লোকসমাজে পরোপকার। আমাদের ভাবনার বদল হয়নি, কিন্তু কার্যক্রম বদলেছে। সেবার কাজ চলছে এখন। পীড়িতদের মধ্যে সেবার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যুগোপযোগী আর্থিক পরিকল্পনা রচনা করতে হবে। সমাজকে ‘স্ব’ বিকাশের কাজে একান্ত সাথী হতে হবে। মহামারীকে ভয় পেলে চলবে না। নিয়ম মেনে, ঠাণ্ডা মাথায়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে যোজনা-পরিকল্পনা করতে হবে। সেবার কাজ মাঝপথে ছাড়লে চলবে না, ক্লান্ত হলে চলবে না। এখনো আমাদের এই কাজ করতে হবে। সবাইকে আমরা সেবা করবো, যে চাইবে ওষুধ ও পথ্য তাকেই দিতে হবে। এটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য, আমাদের ঐতিহ্য। সকলের প্রতি আমাদের সমব্যথিত্ব আছে।
যতদিন দুঃসময় চলবে সেবার কাজ চলবে। নিদ্রা, তন্দ্রা, ভয়, ক্রোধ, আলস্য, দীর্ঘসূত্রতা — ত্যাগ করতে হবে। রাজনীতি নিরপেক্ষ হয়ে সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে, রাজনীতিকে অতিক্রম করে সেবা করতে হবে। সঙ্ঘের কারো প্রতি কোনো শত্রুতা নেই। ক্রোধ এবং ভয় যেন আমাদের সেবাকাজের প্রতিবন্ধক না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *