ক্রমশ হিন্দু শূন্য হচ্ছে ভারত–নেপাল সীমান্ত এলাকা, প্রকাশ্যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করাই এখন কঠিন

জয়িতা ঘোষ
আমাদের ভারত, ২৬ সেপ্টেম্বর: ভারত– নেপাল সীমান্ত এলাকার জনবিন্যাস দ্রুত পালটে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বহু গ্রাম হিন্দু শূন্য হয়ে গেছে। যেসব গ্রামে এখনও হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আছে সেখানেও প্রকাশ্যে তাদের উৎসব পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলমানরা সীমান্ত এলাকার প্রধান সড়ক বরাবর সমস্ত জমি দখল করে নিয়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ওপিইন্ডিয়া নিউজ পোর্টালে।

ওপিইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, ভারত-নেপাল সীমান্তের পুরো এলাকা জুড়ে জনবসতির শ্রেণিবিন্যাস দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। এর কারণ মুসলিম জনসংখ্যার হার তীব্র গতিতে বেড়ে চলেছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ ও মাদ্রাসাও বাড়ছে সমান তালে।

ওপিইন্ডিয়ার(OpIndia) একটি টিম আট দিন ধরে ভারত–নেপাল সীমান্ত এলাকায় একটি সমীক্ষা করে। তারা গত ২০ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন এলাকার হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যার বাস্তব তথ্য তুলে এনেছে।

উত্তরপ্রদেশের ভারত–নেপাল সীমান্ত বরাবর রয়েছে তুলসীপুর-হাররাইয়া রোড। সেই রাস্তার কিছুটা পর থেকে সীমান্ত গ্রাম প্রেমনগর পর্যন্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি বিশাল আকারের মসজিদ রয়েছে। এছাড়া রাস্তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর মাদ্রাসা এবং মাজারও দেখেছে ওপিইন্ডিয়ার সমীক্ষক দল। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পারেন সেইসব গ্রামের এবং তার আশেপাশের হিন্দুদের কেমন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশের বলরাম জেলার আহ্লাদী গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান হরিশ চন্দ্র শর্মার সঙ্গে ওপিইন্ডিয়ার বিশেষ সমীক্ষক দল কথা বলেছিল। হরিশ চন্দ্র শর্মা গত ২০ বছর ধরে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এর মূল কারণ, ওই গ্রামে শর্মা সম্প্রদায় এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। অঞ্চলের সমস্যার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁর কাছ থেকে জানা গেছে।

হরিশ চন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, এলাকায় জনসংখ্যার ভারসাম্য তীব্র গতিতে হারিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা গত ২০ বছরে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে গেছে। শর্মা জানিয়েছেন, প্রচুর অচেনা-অজানা লোকজন এসে তাদের গ্রামে এবং আশেপাশের গ্রামে বস্তি বানিয়ে বসবাস করা শুরু করে। তারপর তারা একাধিক বিয়ে করে এবং তার ফলে আরো দ্রুত সন্তান বৃদ্ধির কারণে এই জনসংখ্যার ভারসাম্যের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন খুব সহজেই হিন্দুদের জমি, জায়গায় দখল করে নিচ্ছে।

হরিশচন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, এটা পরিকল্পিত ভাবে হয়েছে। প্রথমে আস্তে আস্তে কোনও গ্রামে বাইরের থেকে আরো মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আসতে থাকে। যখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো, তখন এখানকার মুসলমানরা সেই সব লোকদের নিজেদের আত্মীয় বলে পরিচয় দিত। এরকমভাবে ধীরে ধীরে মুসলমানরা তাদের গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় এসে জায়গা জমি দখল করতে থাকে। তাছাড়া স্থানীয় হিন্দুরাও প্রচুর টাকার বিনিময়ে নিজেদের জমি বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করত না।

পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, নিজেদের গরিব হিসাবে দেখালেও এই মুসলমানদের প্রচুর টাকা থাকে। তারা মুম্বাইয়ের মতন বড়-বড় শহরে গিয়ে কাজ করে। টাকা রোজগার করে আমাদের এলাকায় জমি, জায়গা কিনে নিজেদের জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি করে। এই কারণেই, তাদের এলাকায় দেখতে দেখতে মুসলমান এবং হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত ৩০:৭০ থেকে ৫০:৫০ –এ এসে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, হিন্দুরা নিজেদের জমি এই মুসলমানদের কাছে বিক্রি করে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকা শুরু করে। কিন্তু উল্টোদিকে একজন মুসলমান নিজের ঘর, জায়গা অথবা জমি মুসলিম ছাড়া অন্য কারো কাছে বিক্রি করে না। এভাবেই মুসলিমরা এই সব এলাকায় একের পর এক জমি দখল করতে থাকে–বিশেষ করে প্রধান সড়ক বরাবর এবং তার আশেপাশের জমি।

হরিশ চন্দ্র শর্মা নিজের এলাকার কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ের উপর নজর রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনও বিশেষ পদক্ষেপ করেনি বা তাঁকে সাহায্যও করেনি।

এইভাবে নেপাল সীমান্তে বেশ কয়েকটি গ্রাম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে। শর্মা জানিয়েছেন, তার দেখা আশেপাশের কিছু গ্রাম যেমন রেহেরা এবং খাপরি’তে ১০০% মুসলিম জনসংখ্যা হয়ে গেছে। বহু গ্রামে কয়েকটি দলিত হিন্দু বাদে আর কোনও হিন্দু নেই। গ্রামগুলোতে একসময় যে হিন্দুরা থাকতো তারা সবাই এক এক করে নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছে।

শর্মা জানান, তাঁর গ্রামেই দুটো মাদ্রাসা এবং দুটো মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। একটি মসজিদ একটু পুরনো আর আরেকটি তার চোখের সামনেই তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটাও সরকারের পয়সায় তৈরি হয়নি।


ছবি: হরিশচন্দ্র শর্মা।

শর্মার কথা অনুযায়ী, এইভাবে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় এলাকায় হিন্দুরা শান্তিতে কোনও উৎসব পালন করতে পারে না। যেহেতু তাঁর গ্রামে হিন্দু জনসংখ্যা কিছুটা বেশি, তাই একটু বাঁচোয়া। কিন্তু তাঁর আশেপাশের গ্রাম, যেমন খাইরা, যেটা তার গ্রামের থেকে এক কিলোমিটার দূরে, সেখানে ৯০% মুসলিম জনসংখ্যার বসবাস। সেখানে হিন্দুরা প্রকাশ্যে কোনও উৎসব পালন করতেই পারে না।

শর্মা জানান, নিজেদের প্রভাবের ফলে বাইরের থেকে যেকোনো মুসলিম এসে নিজের নাম ভোটার তালিকায় তুলে নিচ্ছে।রেশন কার্ড–ও বানিয়ে নিচ্ছে। শর্মার মতে, সবচেয়ে বড় বিষয় হল বাইরের থেকে মুসলিমরা এসে সরকারের সমস্ত স্কিমের লাভ নিচ্ছে যোগ্য হিন্দুদের নিজেদের অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

ওপিইন্ডিয়া জানিয়েছে যে পঞ্চায়েত প্রধান হরিশচন্দ্র শর্মা এমন কিছু গ্রামের কথা বলেছেন যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি যেমন গুদোড়িয়া, রাজওয়াপুর এবং খাপরিপুর। পঞ্চায়েত প্রধানের এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ২০টি এমন গ্রাম আছে যেখানকার মুসলিম জনসংখ্যা ৭০% বা আরো বেশি। সেই সব জায়গার পঞ্চায়েত প্রধান এবং অন্যান্য পদগুলো শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই রাখা হয়েছে। সেখানে হিন্দুদের অবস্থা এমনই শোচনীয় যে তারা মুসলমানদের সাথে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতেই পারে না। শর্মা এমন কিছু গ্রামের নামও বলেছেন যেখানে কোনো হিন্দু নির্বাচনে দাঁড়ায় না।

‘Celebration of Hindu festivals a challenge, Muslims acquire all lands on highways’: Ground report from Indo-Nepal border https://www.opindia.com/2022/09/celebration-of-hindu-festivals-challenge-muslims-acquiring-lands-ground-report-from-indo-nepal-border/

One thought on “ক্রমশ হিন্দু শূন্য হচ্ছে ভারত–নেপাল সীমান্ত এলাকা, প্রকাশ্যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করাই এখন কঠিন

  1. Asadulla Shaikh says:

    BBC. তথ্য অনুযায়ী এখানে হিন্দু প্রধান এলাকা ।ভুল তথ্য দিয়ে মানুষের মনে বিভেদ তৈরি করা ।এটা দেশের পক্ষে খতিকর ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *