স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৪ জুলাই: তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহের বেশী কিছুটা সময়। কিন্তু এখনো এলাকার সাধারণ মানুষ ভুলতে পারছেন না তাদের প্রিয় “দেবেন দা” মানে হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়কে। অত্যন্ত সাদামাটা, পরোপকারী মানুষটা আত্মহত্যা করবে হঠাৎ করে এমনটা ভাবতে নারাজ এলাকার মানুষ। তারা জানিয়েছে দেবেনবাবুর মৃত্যুর পেছনে অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য গত ১৩ জুলাই রায়গঞ্জ ব্লকের বালিয়া মোড় এলাকায় একটি বন্ধ দোকান ঘরের সামনে দেবেনবাবুর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বিজেপি বিধায়কের এই রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় তীব্র আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য রাজনীতিতে। পরিবার ও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন মৃতদেহের যা অবস্থান ছিল তাতে স্পষ্ট দেবেনবাবুকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দাবি ওঠে সিবি আই তদন্তের। তবে সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ করে সি আই ডি তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার।
তদন্তে নেমে মৃত বিধায়কের জামার পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া একটি সুইসাইডাল নোট হাতে আসে সি আই ডি-র। তার ভিত্তিতে নীলয় সিংহ ও মাবুদ আলীর নাম জানতে পারে তারা। মালদা থেকে নীলয় সিংহকে গ্রেপ্তার করা হলেও অপর অভিযুক্ত মাবুদ আলী এখনো অধরা। তদন্তে উঠে আসে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গন্ডগোলের বিষয়টি ও।
কাটু বর্মন নামে এলাকার এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন দেবেন দা। প্রতিদিন সকালে দোকানে এসে চা খেত, পেপার পড়তো। দোকানেই বহু মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে দাদার সঙ্গে কথা বলতে আসতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন সকলকে। আমি যে চা দোকানটি করছি দেবেন দা–ই আমাকে এই চায়ের দোকানটি করে দিয়েছেন। এই মানুষ কোনওদিন আত্মহত্যা করতে পারে না। মৃত্যুর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ঘটনার পর কয়েকদিন রাতে ঘুমাতে পারিনি।
অপরদিকে লক্ষ্মীস্বর বর্মন নামে এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, দেবেনবাবু এখানে প্রতিদিন এই চায়ের দোকানে এসে চা খেতেন পেপার পড়তেন। এছাড়াও হেমতাবাদ বিধানসভার এলাকা থেকে বিভিন্ন মানুষ আসতেন দেবেনবাবু সাথে দেখা করতে। দেবেনবাবুর মতো লোকই হয় না। সাধারণ মানুষের উপকার করতেন। উনার মতো আমাদের গ্রামে কেউ নেই বলে জানান লক্ষ্মীস্বর বর্মন।
গ্রামবাসী নিত্যগোপাল দাস বলেন, সকলের খুব প্রিয় ছিলেন দেবেনবাবু। কারোর আদালতে মামলা, ছেলে মেয়েকে স্কুল কলেজে ভর্তি করা থেকে পারিবারিক যেকোনো সমস্যা নিয়ে সকলে আসতেন তাঁর কাছে। তিনি হাসিমুখে সবাইকে সাহায্য করতেন। তিনি এভাবে চলে যাবেন, ভাবতে পারছি না। মন খুব খারাপ। আমরা চাই এই মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত খুব ভালো ভাবে হোক।