Kazi Tamim, বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে:
আমাদের ভারত, ১৪ অক্টোবর: বাসা মন্ডপের একদম কাছেই। কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে মূর্তির সাথে কুরআন রাখার ঘটনা আমার এলাকার। আমার বাসার পাশেই মণ্ডপ। জানালা থেকেই সব দেখা যায়। কুরআন শরীফটা কাল রাতেই কেউ সেখানে রেখেছে। যখন কেও ওই মণ্ডপে ছিল না তখন।
এটা একটা আবাসিক এলাকা। আর এই মণ্ডপটা অস্থায়ী। শুধু দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে ১০ দিনের জন্য বানানো হয়। পূজা শেষ হবার পরেই আবার মণ্ডপ ভেঙ্গে ফেলা হয়। এখানে রাতে মানুষ থাকে না। আর নানুয়া দীঘির পাড়ে রাতে এমনিতেও মানুষ সহজে বাইরে বের হয় না। এমনকি কোনো প্রশাসনের লোকও কাল রাতে মণ্ডপ পাহারা দেওয়ার জন্য সেখানে ছিল না। কারণ এই মণ্ডপে কখনও কোনো সমস্যা হয় নাই। তবে কাল রাতে কয়েকবার পুলিশের গাড়ি এসে পুরা এলাকা ঘুরে গেছে। এক জায়গায় কয়েকজন ছেলেকে এক সাথে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। হয়তো প্রশাসনের আগে থেকে কিছু ধারণা ছিল। কারণ এর আগে এতো বছরে কখনোই এই এলাকার পূজায় পুলিশ আসে নাই। ধারণা থাকলে রাতে কেন পুলিশ মণ্ডপ পাহারা দেয় নাই সেটাও একটা প্রশ্ন।
কাল রাতে পূজা মণ্ডপ খালি ছিল সম্পূর্ণ। রাত প্রায় ৩-৪ টার দিকেই মণ্ডপ খালি করে সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। সকালে পূজা শুরু হবার আগেই কুরআন শরীফটা এলাকাবাসীর নজরে আসে। তখনও পুরোহিত আসে নাই। পুরোহিত আসার পর পুরোহিত নিজে অনুরোধ করেছে যাতে এই কুরআন শরীফটা সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসী সেটা না করে প্রশাসনকে খবর দিয়ে পুজাই বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। হিন্দুরা এটায় বাধা দেওয়ায় প্রথমে বাইরে থেকে লোকজন এনে পুরা মণ্ডপ ভেঙ্গেছে, প্রতিমা ভেঙ্গে দীঘিতে ফেলে দিছে, এরপর যেই হিন্দুরেই সামনে পেয়েছে তাকেই পিটাইছে। পাশ্ববর্তী কিছু মাদ্রাসা কমিটির লোকেরা এটায় নেতৃত্ব দিছে। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য গুলি চালাইছে।
এই মণ্ডপটাতে হিন্দুদের থেকে মুসলিমরা বেশি যায়। বছরের পর বছর ধরে আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসাথে মিলে মিশে থাকে। পূজায় হিন্দু মুসলিম একসাথে আনন্দ করে। কখনও কোনো সমস্যা হয় নাই। এলকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই হিন্দু। আর বেশির ভাগ স্থানীয় বাড়ি ঘরও হিন্দুদের। সবাই এক সাথে বসবাস করে। আর এটাই কিছু মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াইছে। ইচ্ছা করে এই কাজটা করা হয়েছে দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করার জন্য। বড় কোনো ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস মনে হচ্ছে। আর কুরআন শরীফটা রাখছেও এমন ভাবে যেন সবার চোখে পড়ে। একদম সামনের দিকে হনুমান মূর্তির কোলের উপর।
হিন্দুরা তো এতো বলদ না যে এভাবে কুরআন রাখবে। এটা যে কেউ ইচ্ছা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে করেছে সেটা সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু ক্ষ্যাপা পাবলিককে এটা বুঝাবে কে? তারা একটার পর একটা গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কুরআন নাকি দুর্গার পায়ের নিচে রাখছে, কুরআন রেখে পূজা হইছে, পুরোহিতকে বলার পরও পূজা বন্ধ হয় নাই। এইগুলো বলে বলে মানুষকে আরো বেশি উসকে দিচ্ছে। অথচ কালকে রাতের পর এখানে আর পূজা হয়নি। আমার তো চোখের সামনে সব দেখা। প্রশাসন যদি শক্ত না হতো তাহলে আজকে বহু হিন্দু মারা যাইতো। সকালের পরিস্থিতি যেমন ছিল পুলিশ যদি গুলি না চালাইতো তাহলে হয়তো রামু ট্র্যাজেডির চেয়েও ভয়াবহ কিছু হতো।