বিশেষ সংবাদদাতা, আমাদের ভারত, কলকাতা, ২১ জুলাই: দক্ষিণ কলকাতায় সার্ভে পার্ক কালী মন্দিরের দায়িত্ব হস্তান্তর হল। মন্দিরের তদারকির বাড়তি দায়িত্ব নিলেন স্থানীয় সমবায় সংগঠনের প্রশাসক মধুছন্দা ভট্টাচার্য। তিনিই মন্দিরের আর্থিক ব্যবস্থা দেখাশোনার দায়িত্ব অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমবায় সমিতির এক সদস্যের হাতে তুলে দিয়েছেন।
যাদবপুরের কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গণ-সংলগ্ন ৩১ বছরের পুরনো জাগ্ৰত এই মন্দির সম্পর্কে নানা অভিযোগ উঠছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। সূত্রের খবর, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মন্দিরের আহ্বায়ককে তলব করা হয়েছিল। ওনাকে দশ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। উনি কোনও হিসাব পেশ করতে পারেননি।
এক মাস পরেও হিসাব দাখিল না হওয়ার ফলে প্রশাসক মধুছন্দা ভট্টাচার্য অতি সম্প্রতি মন্দিরের আর্থিক ব্যবস্থা দেখাশোনার দায়িত্ব অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থানীয় বাসিন্দা অলোক সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অলোকবাবুর বক্তব্য, “গত ৭ বছর ধরে মন্দিরে পুকুর চুরি হচ্ছে। সে কারণে সকাল, সন্ধে বেশ কয়েক ঘণ্টা আমাকে মন্দিরে কাটাতে হচ্ছে। কর্তব্য সম্পাদন করতে গিয়ে বুঝতে পারছি যে চোরদের মধ্যে এসে পড়েছি। ওরা টেক্কা দিয়ে চুরি করছে, মায়ের মন্দিরে বসে। মা কালী সবাইকে চৈতন্য দিন।“
অলোকবাবু এই প্রতিবেদককে জানান, “খবর পেলাম বহু সময় রসিদ কাটা হয় না, বিশেষ করে ছোট অংকের অনুদানের ক্ষেত্রে। তার ওপর টাকাগুলো সংগ্ৰাহকরা বাড়িতে নিয়ে যান। কে, কখন, কাকে, কোথায় কত টাকা দেন, তার সঠিক হিসাব কেউ জানেন না। কোনও হিসাব রাখার সঠিক পদ্ধতি নেই। অনেকেই সোনার গয়না, শাড়ি, ছেলে মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে মোটা টাকা দান করেন। গতকাল আমি এক ঘন্টা বসে থেকে প্রায় ছ-সাত হাজার টাকা অনুদান প্রদান করতে দেখলাম। আমি সামনে ছিলাম বলে রসিদ কাটলো।“
মন্দিরের অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সার্ভে পার্ক সমবায় সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক সাম্যসাধন রায়চৌধুরী বুধবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের নির্বাচিত সমিতি মন্দির দেখভাল করেছে। এর পরে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রশাসক দেখাশোনা করছেন। মন্দির কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে সব রকম বিধি মেনেছি। অডিট রিপোর্ট আছে। যাঁরা অভিযোগ আনেন, বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কেন অনিয়মের প্রমাণ দাখিল করতেন না? কোনও অভিযোগের ভিত্তি নেই। সমিতি এবং মন্দিরের জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি। ২০১৪ সালে সমিতির যা তহবিল ছিল, তা অন্তত পাঁচগুন বেড়ে এখন ৭২ লক্ষ টাকা হয়েছে। সার্ভে পার্কের কালীমন্দির আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার স্থান। শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রশাসকের কাছে আমি সাময়িক অব্যাহতি চেয়েছি। প্রশাসক আমার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।