শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস

আমাদের ভারত, শিলিগুড়ি, ২৯ জুন: শেষমেশ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। শিলিগুড়ি পৌরনিগমের পর মহকুমাতেও থাবা বসালো রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মহকুমা পরিষদের নয়টি আসনের মধ্যে আটটিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, চারটি পঞ্চায়েত সমিতিও নিজেদের দখলে রেখেছে শাসক দল।

পঞ্চায়েত সমিতির ভোট গণনার পর পরই শুরু হয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্ছ্বাস। মহাকুমার চারটি পঞ্চায়েত সমিতির ভোট গণনার শুরুতে খড়িবাড়ি বারোটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে নয়টি তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে। তিনটিতে বিজেপি জয় পায়। নকশালবাড়িতে তৃণমূলের ফল গতবারের তূলনায় আরো ভালো হয়েছে। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির ১৮ টি আসনের মধ্যে একটিই মাত্র বিজেপি দখল করতে পেরেছে। বাকি ১৭ টি তৃণমূল নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৫ টি আসনের মধ্যে ১২ টি তৃণমূল এবং তিনটি আসন বিজেপির দখলে গেছে। ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১৭ এবং বিজেপি ৪ টি আসনে জয়ী হয়েছে।

অন্যদিকে, ২২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৯ টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে মহকুমা পরিষদের আসনে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সভাধিপতি প্রার্থী তথা গতবারের বিজয়ী প্রার্থী কাজল ঘোষ। পরাজিত হয়েছেন তাবড় সিপিএম নেতা গৌতম ঘোষ। জয়ী হয়েছেন তারকা প্রার্থী রুমা রেশমি এক্কা, নলিনী রঞ্জন রায়। এদিকে এবারের সবার নজর ছিল ফাঁসিদেওয়া আসনে। সেখানে আইনুল হক বনাম নির্দল প্রার্থী আখতার আলির লড়াই ছিল। সেখানেও ১৬০০ ভোটে জয়ী হয়েছেন আইনুল হক।

অন্যদিকে, জয়ী হয়েছেন প্রাক্তন সভাধিপতি জ্যোতি তির্কে। সব মিলিয়ে সরগরম ছিল গণনা। জ্যোতি তির্কে বলেন, “এই জয় মানুষের জয়, মা, মাটির জয়। এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়।” আইনুল হক বলেন, “নির্দল, বিরোধী যাই থাকুক না কেন মানুষ আমাদের পাশে ছিল। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে ছিল, আছে থাকবে।” পরাজিত প্রার্থী আখতার আলি বলেন, “আমি পরাজয়কে মাথা নত করে স্বীকার করছি। তবে ভয়মুক্তভাবে যদি ভোট হতো তাহলে হয়তো আমি জয়ী হতাম।”

অন্যদিকে, গণনার সময় কারচুপির অভিযোগ। প্রতিবাদে গণনা কেন্দ্রের ভিতরেই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে বসল বিজেপি। অভিযোগ, কাউন্টিংয়ের সময় বিজেপি প্রার্থী ও কাউন্টিং এজেন্টের অবর্তমানে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জয়ী ঘোষণা করা হয় মহকুমা পরিষদের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কুমুদিনী বারিককে। আর এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পরে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। পুনর্গণনার দাবিতে তারা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে বসে। প্রার্থী রেনুকা যাদবের অভিযোগ, তিনি এবং তার কাউন্টিং এজেন্টের অবর্তমানে আচমকা তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়ী ঘোষণা করা হয়৷ এরপরই তারা প্রথমে রিটার্নিং অফিসারের পুনর্গণনার দাবি জানায়। রিটার্নিং অফিসার অস্বীকার করলে রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনেই কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখায়। ব্লক বিজেপি সভাপতি সন্তোষ সিংহ বলেন, “আমাদের অনুপস্থিতিতে আচমকা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হল। আমাদের নথি পর্যন্ত দেখালো না। আমরা চাই পুনরায় কাউন্টিং হোক।”

বুধবার সকাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনের গণনা শুরু হয়। সকাল থেকেই গণনা কেন্দ্রের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা। গণনার সময় যতো পার হতে শুরু করে ততোই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের গণনা চলছিল ফাঁসিদেওয়া হাইস্কুলে। গণনা কেন্দ্রের বাইরে ১৪৪ ধারা লাগু করা হয়েছিল। কিন্তু কর্মী সমর্থকরা সেই আইন উপেক্ষা করেই ভিড় করতে শুরু করে। এরপর যখন একে একে ফল বেরোতে শুরু করে প্রার্থীরা গণনা কেন্দ্রের বাইরে বেরোতেই তাদের নিয়ে শুরু হয় উল্লাস ও পালটা উল্লাস। আর তাকে ঘিরেই শুরু হয় উত্তেজনা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফ। তারা পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *