এডভোকেট সমীর পাল
আমাদের ভারত, ১৭ জুন: মনে পড়ে কি রাজনাথ সিং তখন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। বি জে পি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছে। রাজনাথ সিং প্রেস মিট করছিলেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করছিলেন যে বিজেপিতে কি সার্জারির দরকার? তখন রাজনাথ উত্তরে বলেছিলেন কোন পাগলের কথা এটি? সাংবাদিক সংকোচের সাথে বলেছিলেন এটা আমি বলছি না এটা স্বয়ং মোহন ভাগবত বলেছেন। রাজনাথ সিং লজ্জিত হয়ে বলেছিলেন যে আমি তার সাথে কথা বলে নেব। তারপর ব্যাপারটা ধামাচাপা পডে যায়।
কিন্ত সংঘের মধ্যে ধামাচাপা পড়ে না। সংঘ অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয় যে মুখটা বদলানোর দরকার আছে, আর সেটা করার জন্য মোদিজীকে বাছা হয়। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য রাজনাথ জীকে সংঘ নির্দেশ দেন, সেই নির্দেশ রাজনাথ জী পালন করেই আজও টিকে আছেন।
আজ যখন বাংলায় বি জে পি নিয়ে অনেক জল ঘোলা হচ্ছে তখন কিন্ত সেই ঘটনাটাই মনে করিয়ে দেয়। আজ সেই রকম একটি সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো সার্জারির কাজটা শুরু হবে কি ভাবে? এমন নয় যে বর্তমান দলের শাসক কমিটি দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। এমন নয় জে তার কোনও সম্ভাবনাও আছে। তাহলে পথটা কি?
বিশেষজ্ঞরা বলেন যখন কোনও অঘটন ঘটে তার ঠিক পর পর সেই এলাকার মানুষের কাছ থেকে লাগাতার রিপোর্ট নিতে হয়। নিতে নিতে সব রিপোর্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি কমিটির মাধ্যমে সেটাকে বিশ্লেষণ করলেই আসল কারণটা ধরা পড়ে। পার্টির
কাছে এলাকার মানুষ কারা? পার্টির তৃণমূল স্তরের কর্মীরা। তাদের মতামত ঠান্ডা মাথায় নেওয়ার অভ্যাস বাড়ানো। কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া যারা বঞ্চিত বোধ করছেন(যারা কোনও দায়িত্বে ছিলেন না)তারাই আগে বলবেন আর সবই লেখা হবে। পারলে লিখিত রিপোর্ট নেওয়া হবে তাদের কাছ থেকে। এতে কর্মীদের দুঃখ যন্ত্রনা কমবে আর বাইরে বলার অভ্যাসটা কমে যাবে–আর একটা শ্রেণির জন্ম হবে যারা নতুন স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে পারবেন।
এটা করতে গেলে যারা বসে গিয়েছিলেন (বিভিন্ন কারনে। সেই কারন অনুসন্ধান এখন করার দরকার নেই।) তাদেরকেই একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে নামিয়ে দেওয়া দরকার। যারা অফিসিয়াল তারা সেখানে চুপচাপ বসে সমালোচনা শুনুন তাতে পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে। কর্মীদের মনোবল ফিরে পাবে আবার কাজ শুরু হয়েছে এই বার্তা যাবে। হিংসা কখনোই শুধুমাত্র প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা অথবা ওপরতলার অঙ্গুলি হেলনে বন্ধ করা যায় না, কেননা যারা হিংসাশ্রয়ী তারা ঘুর পথেও হিংসা আমদানি করতে সক্ষম। তারা হিংসা এজেন্ডাটাকে খুব সুন্দর ভাবে রূপায়িত করতে পারে। তাছাড়া উপরের কোনও ব্যবস্থার মাধ্যমে হিংসা বন্ধ হলেও যারা হিংসার শিকার তারা তাদের মনের ভয় কাটাতে পারবে না। এর একটাই দাওয়াই, যারা হিংসার শিকার তাদের অনতি বিলম্বে দলের সামনের সারিতে আনার ব্যবস্থা করা উচিত, তবে তারা মন থেকে হিংসার ভয় কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে যাবে। আজ যারা পুরনো অথচ বসে গেছেন তারা কিন্ত এভাবেই নতুন অবস্থার সামাল দিয়ে পুরনো হয়েছেন।
যুব আন্দোলনের পুরোধা হিসাবে অনতি বিলম্বে কোনও গ্রামীণস্তর থেকে উঠে আসা তরুণীকে দায়িত্ব দিয়ে সামনের সারিতে আনতে হবে, যার কথা বার্তায় গ্রামীণ ছাপ থাকবে। মহিলা ব্রিগেড তৈরি করে রাস্তায় নামাতে হবে– সেখান থেকেই আগামী দিনের কমিটি বানাতে হবে। যারা এতদিন নির্বাচনের টিকিট পেয়ে হেরছেন তাদের বলা হোক আর টিকিট পাবেন না, যদি কাজ করতে চান করুন না হলে রাস্তা সাফ করুন। জেলা থেকেই শৃংখলা রক্ষা কমিটির কাজ সক্রিয় করতে হবে এবং নিয়মিত ওয়ার্নিং এর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কর্মীদের যে কোনও চিঠি বা অভিযোগের জবাব তাঁকে ডেকে অথবা লিখে জানাতে হবে। মনোনীত করে নেতা বসান বন্ধ করতে হবে। দলের মধ্যে নির্বাচন না থাকলেও তার মতো একটা পরিস্থিতির জন্ম দিতে হবে। যাতে কর্মীদের মধ্যে ধারনা জন্মায় স্বজন পোষন হচ্ছে না।
শৃংখলা রক্ষার জন্য নজির সৃষ্টি করতে হবে যাতে শৃংখলাবদ্ধ দল বলতে শুরু করে। যারা বসে গেছেন তাদের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য ও গৌরবান্বিত করার জন্য তাদের খুঁজে বের করে আগামী এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণ টিমের দায়িত্ব দিলে দেখাযাবে ঘোড়ার মত পার্টির কাযে ছুটতে থাকবে।
মনে রাখতে হবে ২০১১সালে সিপিএম সরকার চলে যাবার পর বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রোজ আলিমুদ্দিনে আসতেন আর অফিসে বসে সারাদিন পার্টির কমরেডদের লেখা চিঠিগুলি মন দিয়ে পড়তেন আর বোঝার চেষ্টা করতেন কী ভুল হয়েছিল? এর একটাই অর্থ কর্মীরা যদি মনে করতে থাকে দলে আমার কদর দেখা হয় তবে কর্মীদের গৌরব বোধ হয়, সে তখন দলের জন্য মার খেয়ে কষ্ট পায় না। বরং মনে করে এটা আমার দায়িত্ব, এখান থেকে সরা যায় না। কে পালানোর চেষ্টা করছে সেটা দেখে না। কারন সন্তানকে বাঁচাতে বাবা যখন কিডনি দান করেন তখন বাবা বা মায়ের আফশোষ হয় না। ওই রকম ভাবাবেগ জাগিয়ে তুলতে হবে। ভগবান চৈতন্যকে মনে করে ক্ষমা করার মাধ্যমেই অনুসরণকারির সংখা বাড়াতে হবে। ভুলে যাওয়াটা ঠিক হবে না, যে কর্মী বলছে আমাকে রাস্তায় ফেলে তৃণমূল মেরেছে সে পদ চায় না, সে চায় তাঁর পিঠে নেতা একবার হাত বুলিয়ে বলুক, তোর খুব লেগেছে আমরা আছি–ব্যাথা কমে যাবে।
একদম আমার মনের কথাটাই তুলে ধরছেন লেখক। খুব খুব ভাল লাগল লেখাটা পড়ে। সুপরামর্শ, একদম যথার্থ।