আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২৩ নভেম্বর: উত্তরবঙ্গের সবকটি চা-বাগানের স্টাফ, সাব স্টাফ, চৌকিদার, চা-বাগানের গাড়ির চালক সহ চা-বাগানের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করতে এবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকলো রাজ্য সরকার। শিলিগুড়িতে শ্রমদফতরের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক অফিসে ডিসেম্বর মাসের ৩ ও ৪ তারিখ দুদিন এই বৈঠক হবে।
উত্তরবঙ্গের ৩০২টি চা-বাগানে চা-শ্রমিকদের বাদ দিলে অন্তত ১০ হাজার চা-বাগান কর্মী রয়েছেন। যাদের সিংহভাগ চা-বাগানের অফিসের কাজের সঙ্গে যুক্ত।দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ বাকি সবকটি চা উৎপাদন করছে এমন জেলার চা-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। কমবেশি ৩৩টি ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, শেষ বার ২০১৪ সালে চা-বাগানের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছিল। তারপর ৬ বছর কোনও বেতন বৃদ্ধি হয়নি।স্বাভাবিকভাবেই বেতন বৃদ্ধির দাবি বাড়ছিল। ইতিমধ্যেই দাবি আদায়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন চা-বাগানের কর্মীদের সংগঠন। রাজ্য শ্রম দপ্তরের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,৩, ৪ ডিসেম্বর দুদিন বৈঠক ডাকা হয়েছে শিলিগুড়িতে। আগে ঠিক ছিল বৈঠকটি কলকাতাতে হবে। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে পরবর্তীতে স্থান বদল করা হয়েছে।”
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, স্টাফ ও সাব স্টাফদের বেতন আপাতত ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। চৌকিদার ও ড্রাইভারদের বেতন অনেকটাই কম।গত ৬ বছরে দেশে যেভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি হয়েছে তাতে সমস্যা বেড়েছে বাগানের কর্মীদের। চা-শ্রমিক সংগঠনগুলির একটি অংশের অভিযোগ উত্তরবঙ্গে চা-বাগানগুলির জন্য ৮৫ শতাংশ দায়িত্ব কেন্দ্রের। যদিও এই দায়িত্বের অনেকটাই পালন করছে রাজ্য।
চা-বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদূর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি মোহন শর্মা বলেন,”আজকেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছি আমরা। শুধু চা বাগানের কর্মীরাই নয়, চা-শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়েও দুদিনের বৈঠকে আলোচনা হবে। আমরা আশাবাদী বেতন বৃদ্ধি পাবে। কাম্য বেতন পাক চা-কর্মীরা এটা মনেপ্রাণে চাই আমরা। রাজ্য সরকার যথেষ্ট ইতিবাচক গোটা বিষয়টিতে।”
এদিকে, চা-বাগানগুলিতে বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ চা শ্রমিক রয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচন সামনে। চা-শ্রমিকদের পাশে থাকার, তাদের অধিকার বিষয়ে পরিস্কার বার্তা দিতে চাইছে রাজ্য, বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। উল্লেখ্য, এবার কোভিড পরিস্থিতিতে গোটা দেশের মধ্যে রেকর্ড পুজো বোনাস পেয়ে নজির তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে। ২০ শতাংশ বোনাস পেয়েছেন চা-শ্রমিকরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, চায়ের দাম বৃদ্ধি, চায়ের রপ্তানি, চা-বাগানে কেন্দ্রীয় বকেয়া প্রাপ্যগুলি কেন্দ্রের দেখার কথা। সমস্যাগুলি না থাকলে সম্ভবত অনেক আগেই চা-বাগানের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পেতে পারতো। যদিও এবছর চায়ের বাজার ভাল। চা-মালিকদের উপরই নির্ভর করবে কত দ্রুত কতটা বেতন বৃদ্ধি পাবে।