জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২০ জুলাই: ‘জমি আন্দোলনে ডক্টরেট করেছি। ২৩৪ দম্ভচুর্ন করেছি। ডিপিএলের জমি রক্ষা করব।’ মঙ্গলবার দুর্গাপুরে ডিপিএলের জমি বিক্রির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিজেপির ধর্নামঞ্চে এসে এরকমই হুঁশিয়ারী দিলেন বিধানসভার বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার শূন্য তাই জমি বেচতে চাইছে।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরে ধুঁকতে থাকা তাপবিদ্যুতকেন্দ্র ডিপিএল বাঁচাতে সংস্থার জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। জমি বিক্রির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে বিজেপি। গত কয়েকদিন ধরে দুর্গাপুরে ডিপিএলের গেটের সামনে ধর্না শুরু করেছে বিজেপি। মঙ্গলবার ওই ধর্না মঞ্চে হাজির ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়া ছিলেন, আসানসোলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এদিন আগাগোড়া রাজ্যসরকারের জমি বিক্রির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কড়া তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে রাজ্যের দেনা ছিল ১ লক্ষ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূলের জামানায় এখন হয়েছে ৪ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। কো-অপারেটিভ থেকেও দু হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার শূন্য, একেবারে দেউলিয়া। হলদিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। শুধু ডিপিএল বাঁচানোর জন্য টাকা খুঁজে পাচ্ছে না। হাজার একর জমি সিঙ্গাপুরের পার্টিকে বিক্রি করে দিতে চাইছে।”
তিনি বলেন, “ডিপিএল রুগ্ন। বাঁচানোর অনেক উপায় আছে। ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ নেওয়া যেত। সার্ভাইবল প্যাকেজ আছে। জমি আন্দোলনে ডক্টরেট করেছি। ২৩৪ দম্ভচুর্ন করেছি। ডিপিএলের জমি রক্ষা করব। ২০১৬ বিজেপি ৩ আসন ছিল, এখন ৭৭। রাজ্যের মানুষ প্রতিবাদ করার দায়িত্ব দিয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করব।”
তিনি বলেন, “কোভিডের ভয় দেখিয়ে, কেসের ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে আটানোর চেষ্টা করছে। ভবানীভবনে চাকুরী প্রার্থীদের আন্দোলন রাজ্যের সেই বালির বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। রাজ্য সরকার বাস্তবে চাকরি দিতে পারেননি। ২০১৪ সাল থেকে এসএসসি বন্ধ। ২ কোটি বেকার। জুটমিল বন্ধ হয়েছে। গুপ্তিপাড়ায় সুতোমিল বন্ধ হয়েছে। সাড়ে ৮ হাজার বেকার।”
এদিন তৃণমূলের রাজ্যের বাইরে ২১ জুলাই পালন নিয়ে তিনি বলেন, “২১ বছর তৃণমূল করেছি। অসমের পর্যবেক্ষক ছিলাম। অন্যরাজ্যে তৃণমূল নোটা থেকেও কম ভোট পায়। এরাজ্যে মাননীয়ার দুধেল গাইদের জন্য আর পুলিশের জন্য ভোট পায়। তৃতীয় কোনও লোক ভোট দেয় না। তৃণমূল গরুর গাড়ির হেডলাইট।”
তৃণমূলের পেট্রোপন্যের মুল্যবৃদ্ধির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২০১৩ সালে ইউপিএ -২ আমলে কেন্দ্র আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বেনিয়ন্ত্রন করে দিয়েছে। কেন্দ্র সরকারের কন্ট্রোলে নেই।” তিনি রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, “ভোটের আগে একটাকা ছেড়েছিলেন মাননীয়া। রাজ্য ৩৭-৩৮ টাকা কর পায়। সেটা ছেড়ে শুরু করুন। বাকি আমরা কেন্দ্রের কর ছাড়া নিয়ে বলব।”
তিনি আরও বলেন,” আপনার অর্থমন্ত্রী পেট্রোপণ্যে জিএসটি বসাতে বাধা দেয়।” রাজ্যের ইলেক্ট্রিক বিল নিয়ে তিনি বলেন, “২০১১ সালে ২ টাকা ৮০ পয়সা ইউনিট ছিল। এখন ডোমেস্টিক বিল আকাশছোঁয়া। মানুষের কষ্ট হয়। তিলজলা, কসবার দুধেল গাইরা ইলেক্ট্রিকবিল দেয় না। সেটা আমাদের মেটাতে হয়। আপনারা সাইকেল নিয়ে আন্দোলন করছেন। এবার আমরা হ্যারিক্যান নিয়ে আন্দোলন করব।”
তিনি বলেন, “আগামীকাল রাজ্যে গনতন্ত্র বাঁচানোর দাবীতে আন্দোলন হবে। ২ মের পর রাজ্যজুড়ে সনাতনীদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, ১৯৪৬ সালের ক্যালকাটা কিলিংকে ছাড়িয়ে গেছে।” রাজ্যের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তৃণমূলকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, “উত্তরাখন্ডে বিজেপির নন এমএলএ মুখ্যমন্ত্রী ছিল। এখন এমএল মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় তৃণমূল পিছনের দরজা দিয়ে থাকতে চায়। তাই বিধানসভায় বিল এনেছিল। আমরা বিরোধিতা করেছি।”