আজ মধ্যরাত থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ টালা ব্রিজ, কাল থেকেই ভাঙ্গা শুরু, চলতে হবে অন্য রুটে

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৩১ জানুয়ারি: রেল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বেশ কিছুদিন বিলম্বিত হয়েছিল টালা ব্রিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত। কিন্তু অবশেষে ঠিক হল চূড়ান্ত দিনক্ষণ। জানানো হয়েছে, আজ, শুক্রবার রাত ১০টার পর থেকে টালা ব্রিজে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়ে যাবে আর রাত ১২টা থেকে যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ করে দেওয়া হবে। শনিবার থেকেই ভাঙ্গা শুরু হবে এই সেতু। তারপর মে মাস থেকে নতুন সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে। কমপক্ষে বছর দুয়েক পর ফের পুরনো রুট ফিরে পাবেন শহরবাসী।

পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা ভালোভাবেই জানেন, এই সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বেশ ভালমতো চাপ বাড়বে উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির যান চলাচলে। আর উত্তর শহরতলির সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম বন্ধ হয়ে গেলে যে বিস্তীর্ণ এলাকায় যানজটের তৈরি হবে, সেটা সামলানোই এখন চ্যালেঞ্জ কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিকদের। ইতিমধ্যেই ২৯ জানুয়ারি লালবাজারে বিশেষ সাংবাদিক বৈঠকে টালা ব্রিজের বিকল্প রুট জানিয়েছে লালবাজার।

জানানো হয়েছে, ব্যারাকপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার ক্ষেত্রে বেলগাছিয়া ব্রিজ এবং কলকাতা থেকে ব্যারাকপুরের দিকে আসার জন্য লকগেট ফ্লাইওভার কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। উত্তর মুখী বাস এবং মিনিবাসগুলি যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ হয়ে কে ভি ভি অ্যাভিনিউ এসে লকগেট ফ্লাইওভার ধরে বিটি রোড যাবে। আর বিধান সরণি, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড থেকে আসা বাস-মিনিবাস গুলি শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ পেরিয়ে কে ভি ভি অ্যাভিনিউ ধরে লকগেট ফ্লাইওভারের দিকে চলে যাবে। যানবাহনের চাপ হালকা করার জন্য কিছু বাস বাগবাজার পথে এগিয়ে দিয়ে গ্যালিফ স্ট্রিট দিয়ে লকগেট ফ্লাইওভার ধরানো হবে। তবে সল্টলেক, ভিআইপি, রাজারহাট গামী বাস মিনিবাসগুলি বেলগাছিয়া রোড হয়ে বেলগাছিয়া ব্রিজ ধরে চলাচল করবে।

তবে ছোট গাড়ি একই রুটে এসে লকগেট ফ্লাইওভার অথবা কাশীপুর রোড ধরে বিটি রোডে যেতে পারবে। বিধান সরণি এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড দিয়ে আসা ছোট গাড়িগুলি ওই একই রাস্তা ধরতে পারবে। অর্থাৎ উত্তরমুখী গাড়ি চলাচলের জন্য লকগেট ফ্লাইওভারকে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করা হবে।

উত্তর অর্থাৎ শহরতলি থেকে কলকাতায় প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে বাসগুলি ব্যারাকপুর থেকে কলকাতার দিকে যেতে চাইবে, সেগুলিকে চিড়িয়ামোড় হয়ে দমদম রোড, সেভেন ট্যাঙ্কস, নর্দান এভিনিউ হয়ে রাজা মনীন্দ্র রোড, মিল্ক কলোনি, বেলগাছিয়া ব্রিজ হয়ে পাঁচ মাথার মোড় যেতে হবে। কিছু বাস-মিনিবাস’কে পাইকপাড়া মোড় হয়ে রাজা মনীন্দ্র রোড, মিল্ক কলোনি ধরে বেলগাছিয়া ব্রিজ পেরিয়ে শ্যামবাজার যেতে হতে পারে।

এক্ষেত্রেও ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিটি রোড থেকে আসা দক্ষিণমুখী ছোট গাড়িগুলি চিড়িয়া মোড় থেকে খগেন চ্যাটার্জি রোড পেরিয়ে কাশীপুর রোড পেরিয়ে সেন্ট্রাল এভিনিউ বা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের দিকে যেতে পারবে। আবার একইভাবে ওই গাড়িগুলি আরো এগিয়ে এসে পাইকপাড়া হয়ে রাজা মনীন্দ্র, মিল্ক কলোনি হয়ে বেলগাছিয়া ব্রিজ পেরিয়ে শ্যাম বাজারের দিকে যেতে পারবে। অর্থাৎ বিটি রোড থেকে কলকাতার দিকে যেতে বেলগাছিয়া ব্রিজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। টালা ব্রিজ তৈরি হওয়া পর্যন্ত এই বিকল্প রুট জারি থাকবে।

পুরনো সেতু ভাঙ্গা এবং নতুন সেতু নির্মাণের কাজের জন্য রাজ্যের তরফে ২৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, সেতুর নীচে রেল লাইন থাকার জন্য সেখানে কোনও পিলার তৈরি করা হবে না। বিদ্যাসাগর সেতুর মতো তা কেবল তারে ঝোলানো সেতু হবে। দু’দিকে দুটি করে মোট চারটি স্তম্ভ থাকবে। ৪ লেনের সেতু তৈরি করা হবে। বর্তমান সেতু ভাঙা ও নতুন সেতু নির্মাণের সময়ে চার চাকার ছোট গাড়ি ও দুই চাকার ছোট যানের জন্য বি টি রোড ও শ্যামবাজারের মধ্যে সংযোগকারী চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে যে লেভেল ক্রশিং করা হবে তার জন্য রাজ্য সরকার ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

তবে সমস্ত প্ল্যানিং করেও এখনও দুশ্চিন্তায় লালবাজারের আধিকারিকরা। এতদিন পর্যন্ত ট্রাফিকের বিভিন্ন প্ল্যানিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও টালা ব্রিজ চালু থাকায় মোটামুটি সামাল দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু এখন পুরোটাই আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে তারপর ফের কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে। তাই এবার যানজট কি পর্যায়ে দাঁড়াচ্ছে, তা দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন লালবাজারের আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *