ভারতীয়ত্বের সুর প্রাধান্য পেল প্রয়াগরাজের ‘স্বরাজ ২০২৩’-এ

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২৪ ডিসেম্বর: স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শ আর ভারতীয়ত্বের কথা উঠে এল ‘স্বরাজ ২০২৩’-এর অনুষ্ঠানে। পায়ে পায়ে ৭৫ বছর হল এই বহুভাষিক সংবাদ সংস্থার। ২১ ডিসেম্বরের এই আয়োজনের শিরোনামে অঙ্গীকার করা হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘পঞ্চপ্রণ’-এর।

১৮৯৩ সালে শিকাগো ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ১০ মিনিটের ভাষণে সবার মন জয় করে নেন। বক্তৃতার বিষয় ছিল ভারতীয়ত্ব ও আধ্যাত্মিকতা। এ কথা জানিয়ে বিশেষ অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের কাশী প্রান্তের সহ প্রান্ত সহায়ক মুনীষ কুমার বলেন, “গীতার শ্লোক, ভারতীয়দের ভাবনার যে কথা স্বামীজী বলেছিলেন, আজও তা বিশেষ প্রাসঙ্গিক। সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হল হিন্দুধর্ম। এই বিশ্বাস মানুষে মানুষে মিলন ঘটায়। আমরা সেই সংস্কৃতিকে লালন করছি। এটা আমাদের সৌভাগ্য।“

মুনীষ কুমার বলেন, “আর্থিক বিকাশের সঙ্গে দেশের আধ্যাত্মিক বিকাশের ওপর আমাদের সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা ত্যাগপূর্বক উপভোগের বার্তা দিয়েছেন। ধরণী আমাদের মা। আমরা তাঁর পুত্র। এই সঙ্গে বাড়িয়ে দিতে হবে আতিথেয়তার হাত। বসুধৈব কুটুম্বকম। ভারত যুগে যুগে বিদেশীদের স্বাগত জানিয়েছে। সবাইকে ভাই বলে মেনেছে। দীক্ষিত হয়েছে ‘অতিথি দেব ভব’ মন্ত্রে। তাই ভারত বিশ্বগুরু। সবার কল্যাণ কামনাই আমাদের লক্ষ্য।“

বিশিষ্ট অতিথির ভাষণে ‘গঙ্গা সমগ্র’-র রাষ্ট্রীয় মহাসচিব তথা হরিদ্বারের ‘দিব্য প্রেম সভা মিশন’-র সংস্থাপক আশিস ভাইয়া সমবেতদের তিনবার ওঁম ধ্বণি সহযোগে শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ করান। বলেন, “পঞ্চপ্রয়াগ, পঞ্চধাম, পঞ্চপরমেশ্বর, পঞ্চায়েত, পঞ্চযজ্ঞের, পঞ্চসাকার, পঞ্চকৈলাশ, পঞ্চামৃত,
পঞ্চাঙ্গ— ভারতের আত্মার কেন্দ্রে আছে এই ‘পঞ্চ’ কথাটি। আনন্দের কথা, হিন্দুস্থান সমাচারও এই ‘পঞ্চ’ কথাটিকে অনুষ্ঠানে উপজীব্য করেছে।”

স্বামীজীর উক্তি দিয়ে আশিসবাবু বলেন, ত্যাগ আর সেবা ভারতীয় রাষ্ট্রের কৌলিন্যের নেপথ্যের চাবিকাঠি। মহর্ষি অরবিন্দও শরীরে আত্মার মাহাত্ম্যের কথা বলেছিলেন। বিশ্বে ভারতের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য স্বীকৃতি পেয়েছে। এসবের নিরিখেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১৫ আগস্ট ‘পঞ্চপ্রণ‘-এর মাধ্যমে আত্মজাগরণের কথা ঘোষণা করেছেন।

অনুষ্ঠানের মুখ্য বক্তা হিমাচল প্রদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য কুলপতি চন্দ্র অগ্নিহোত্রী বলেন, “নিজের ভাষা এবং সংস্কৃতি— এই দুটি হল আত্মজাগরণের মূল কথা। কখনও এর থেকে বিচ্যুত হবেন না। বিচ্যুতি হলে দেশ তার মাশুল গুনবে। সংস্কৃতি-ইতিহাস-ভাষার মধ্যে বেঁচে থাকে ঐতিহ্য। আরব-তূর্কি-মোঘলদের আগ্রাসন থেকে ভারত বেঁচেছে হিন্দুত্বের জেরে। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের এই হিন্দুস্থানের ভিন্নতা যা-ই থাকুক, সুর এক। আর তা হল ভারতীয়ত্ব। এটাই ছিল দাদাসাহেব আপ্তের মন্ত্র, হিন্দুস্থান সমাচার এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই দুটোর সঙ্গেই আমি অনেকদিন জড়িত ছিলাম।

প্রধান অতিথির ভাষণে অযোধ্যা ‘হনুমান নিবাস’-এর মহন্ত আচার্য মিথিলেশ শরণজী বলেন, “সরস্বতী নদী বাহ্যিকভাবে লুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু অন্তঃসলিলাফল্গুর মত বয়ে চলেছে মানুষের মনে। মানুষ স্বপ্ন দেখে দেবতা হওয়ার। আর দেবতাদের স্বপ্ন ভারতে মানুষ হয়ে জন্মানোর। ভারতীয় চিন্তা, মণীষা, সংস্কৃতি, ভাবধারা একটা গর্বের বিষয়।“ ‘স্বরাজ’-এর ব্যাখ্যার পাশাপাশি আচার্য মিথিলেশ বাল্মিকী রামায়ণ থেকে শুরু করে পুরাণের নানা অধ্যায়ে ভাষার সঙ্গে সংষ্কৃতির সম্পর্কের নানা কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর অধ্যক্ষ অরবিন্দ বালচাঁদ মাদ্রীকার আয়োজকদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সেবার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। কেবল বেসরকারি সংস্থাই নয়, প্রসার ভারতী আমাদের গ্রাহক। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্থার অগ্রজদের পথ ধরে আরব্ধ কাজে এগিয়ে যেতে হবে। সংস্থার পরিবারে আছেন ১৫৫ জন স্থায়ী এবং প্রায় ৩৯৭ জন অস্থায়ী সংবাদদাতা। পূর্ণ ভারতীয়ত্বের আদর্শ বুকে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। দিল্লি, ঝাঁসি, লখনউ, কানপুর— দেশের নানা স্থানে আমরা এই ৭৫ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠান করেছি। বারাণসীতে ভারতের ২২টি ভাষায় গুণীজনদের সম্মানিত করার সৌভাগ্য হয়েছে।

প্রয়াগরাজে জর্জটাউনে জগৎ তারন গোল্ডেন জুবিলি ইস্টার কলেজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাগৃহে এই সম্মেলনে সংযোজনায় ছিলেন সংস্থার পরামর্শদাতা পিএন দ্বিবেদী।

বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট অনেকে। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৪ জনকে দেওয়া হয় ‘সেবারত্ন’ স্বীকৃতি। একজন সাংবাদিককে দেওয়া হয় ‘কলমবীর’ স্বীকৃতি। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্বলন, ভারতমাতা ও সংস্থার প্রয়াত প্রাণপুরুষ শ্রীকান্ত যোশির ছবিতে মাল্যদান ছাড়াও ছিল স্বাগত সমবেত প্রার্থনাসঙ্গীত। জগৎ তাড়ন গোল্ডেন জুবিলি স্কুলের অধ্যক্ষা সুস্মিতা কানুনগো মঞ্চে উপবিষ্টদের পরিচয় পড়ে শোনান। ‘স্বরাজ’-বিষয়ক পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন মেঘনা মিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *