চারাগাছ তৈরি করে মরশুমি ফল চাষের প্রশিক্ষণ দিল বিশ্ববিদ্যালয়

মিলন খামারিয়া
আমাদের ভারত, কল্যাণী, ১০ জুন: খনার বচনে আছে, ‘আম লাগাই জাম লাগাই কাঁঠাল সারি সারি বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি’। বারো মাসের বারো ফল খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো কিন্তু তা পেতে গেলে গাছ লাগানো প্রয়োজন।

পুষ্টিবিদদের মতে একজন মানুষের প্রতিদিন একশো ত্রিশ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত তার শারীরিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য। ফলের দাম বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারেন না। পাশাপাশি নগর সভ্যতার বিস্তারের সাথে সাথে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। শুধু যে কাঠের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে তা নয়, অনেক ফলের গাছও কাটা হচ্ছে। গাছ কাটা পরিবেশের পক্ষে কতটা খারাপ তা জেনেও আমরা যে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বেঁচে আছি তাকেই কেটে চলেছি কালিদাসের মতো।

বিশ্ব উষ্ণায়নের শিকার হয়ে আমাদের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন তা থেকে কিছুটা মুক্তির উপায় দেখাচ্ছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। বর্ষায় নতুন ফলের চারাগাছ লাগাতে হবে কিন্তু দাম বেশি হবার কারণে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য থাকে না। তাই গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভারত সরকারের সর্বভারতীয় ফল-গবেষণা কেন্দ্র (ICAR-AICRP on Fruits)’-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকারের কলমের সাহায্যে কীভাবে ফলের চারাগাছ তৈরি করা যায় তা শেখানো হয়।

একদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে নদীয়া, কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান, হুগলি জেলার মোট ২০ জন ফলচাষে আগ্রহী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র, অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউরি ও অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী ও ড. অনামিকা কর।

এদিন প্রশিক্ষণের শুরুতেই অধ্যাপক মিশ্র উপস্থিত ফলচাষীদের সামনে কাটা-কমল ও গুটি-কলম দেওয়া শেখান। গুটি-কলম দেবার ৩-৫ সপ্তাহের মধ্যেই গাছের নতুন শেকড় বেরিয়ে আসে বলে তিনি জানান।তারপর মূল গাছ থেকে ছেদন করে মাটিতে লাগিয়ে দিলেই নতুন চারাগাছ তৈরি হয়ে যাবে।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী এরপর জোর-কলম দেওয়া শেখান উপস্থিত চাষীদের। দুটি একই প্রজাতির গাছকে কাছাকাছি এনে জোর দিয়ে রেখে দিলে তা জুড়ে যায় এবং তারপর কাঙ্খিত অংশটি রেখে বাকিটা কেটে ফেলে দিলেই নতুন গাছ বড়ো হয়ে ফল দেবে ব’লে তিনি জানান।

গুটি-কলম ও জোর-কলম আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, সবেদা প্রভৃতি ফলের গাছে দেওয়া যায় ব’লে ড. ফটিক কুমার বাউরি জানান। কাটা-কলম ড্রাগন, করমচা, চেরি প্রভৃতি গাছে দেওয়া হয় ব’লে তিনি জানান।

এ-দিনের প্রশিক্ষণের শিবিরের উপকারিতা নিয়ে ড. দিলীপ কুমার মিশ্র জানান, “মরশুমের ফল খাওয়া শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু ফলের অতিরিক্ত দামের কারণে সবার পক্ষে ফল কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন উন্নত জাতের আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা চাষ করার জন্য চাষীদের উৎসাহিত করছি। নিজেরা চাষ করলে যেমন সেই ফল খেতে পারবে পাশাপাশি তা বিক্রি করে মুনাফাও করতে পারবে। এছাড়া ফলের চারাগাছ তৈরি করা শিখে নিয়ে, বিক্রি করে টাকাও রোজগার করতে পারবে নার্সারির মাধ্যমে।”

ভারত সরকার প্রতিবছর প্রায় আশি হাজার কোটি টাকার ফল আমদানি করে বিদেশ থেকে। আর ফল চাষে ভারত আত্মনির্ভরশীল হলে সেই টাকা বিদেশে চলে যাবে না। পাশাপাশি পশু-পখিরাও ফল খেয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারবে। জৈববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি বিশ্ব-উষ্ণায়নের করাল গ্রাস থেকে এ বিশ্বকে রক্ষা করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *