পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য নদীয়ার শিমুরালিতে চলছে হাহাকার

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ৩ জুন:
পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য ও নিয়মিত জলের দাবিতে কল্যাণী শিমুরালির হসপিটাল পাড়ায় চলছে হাহাকার। অনেকে আবার এলাকার বাইরে গিয়ে অনেক দূর থেকে জল নিয়ে আসছেন। বার বার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। এমনকি জলের দাবিতে পথ অবরোধও করেছে এলাকার মানুষ।

জানা যায়, ছয় মাস হল হসপিটাল পাড়ায় পরিশ্রুত পানীয় জল নেই। রাস্তার কলে জল এলেও তার গতি খুব কম। সে কারণে জলের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াবার পর খালি বালতি নিয়েও ফিরে যেতে হচ্ছে মানুষকে। জল দেওয়ার ও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। সে কারণে মানুষ অনেকেই পানীয় জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। যাদের সামর্থ্য আছে তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন, না হলে এলাকার বাইরে থেকে পরিশ্রুত পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ হচ্ছেন হয়রানির শিকার।

পানীয় জল না পাওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার শিমুরালির হাসপাতাল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। ঘণ্টা দুয়েক পর আগামী শুক্রবার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে প্রশাসনের আশ্বাস মেলার পর তারা বিক্ষোভ উঠিয়ে নেন।

এলাকার বাসিন্দা সীমা মন্ডল জানান, জল যদি নির্দিষ্ট সময় না আসে তাহলে প্রতিনিয়ত আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রধান এবং পিএইচই দপ্তরের কাছে বারবার জানালেও তারা কোনো সুরাহা করেননি। উল্টে পিএইচই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে আর প্রধান একইভাবে তার ন্যূনতম দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে জল দপ্তর কল্যাণী পিএইচই কে দেখান। এছাড়া আমাদের এখানে একটাই চাপা কল। আমফানের পর বাইরে থেকে অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে জল নিতে হচ্ছে। আমাদেরও সংক্রমণের ভয় রয়েছে। সে কারণেই বাধ্য হয়ে পথ অবরোধ করা হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা সুস্মিতা দে জানান, আজকে এখনো জল আসেনি। পৌনে একটা বাজে আমরা জলের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছি কিন্তু জল নেই। কোনও নির্দিষ্ট টাইম নেই জল দেবার। আমরা চাইছি যে টুকু জল দিক নির্দিষ্ট সময়ে দিক। এভাবে চলতে পারে না।

এলাকার আরো এক বাসিন্দা অনিতা মন্ডল জানান, আজকে জল আসেনি এখনো। বিক্ষোভের পরেও ১৫ মিনিটের বেশি আমরা জল পাচ্ছি না। আমরা শুক্রবার পর্যন্ত দেখবো। যদি সমস্যার সমাধান হয় ভালো, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।


শিমুরালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা মন্ডল জানান, এই জলের সমস্যা অনেকদিনের। এখানে বেশিরভাগ মানুষ কুয়োর জল ব্যবহার করে। এখানে কিছু কিছু পাইপলাইন যেগুলো আগে স্ট্যান্ড পোস্ট ছিল সেই ট্যাপের জলই আসত না এমতাবস্থায় ট্যাপের জলটাও বন্ধ করে দিয়েছে পিএইচই। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের যে জলটা আছে সেটা আমাদের সব জায়গাতে স্ট্যান্ড পোস্ট নেই। প্রথম প্রথম একটাও স্ট্যান্ড পোস্ট ছিল না। পঁচিশটা স্ট্যান্ড পোস্ট আমরা পিএইচই থেকে পেয়েছি। পঁচিশটা স্ট্যান্ড পোস্টে এত বড় শিমুরালির সব জায়গায় জল যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি বহুবার এসডিও, বিডিও, পিএইচই কে চিঠি করেছি। যেহেতু পি এইচই পঞ্চায়েতকে লাইনটার পুরোপুরি দায়িত্ব দিচ্ছে না তাই পঞ্চায়েত চুরি করে বা বেআইনি ভাবে কখনোই হোম কানেকশন দিতে পারে না।

পিএইচইর বক্তব্য, একটা জলের ট্যাঙ্কিতে যে জল লোড করা থাকে যদি ১০০ জনের জল ধারণ করার ক্ষমতা থাকে একটা ট্যাঙ্কিতে তাহলে আমার এখানে হাজারের ওপর লাইন হয়ে গেছে। এটাও আমি বলব পিএইচইর দোষ? মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভুগে ভুগে বেআইনিভাবে এই লাইনগুলো নিয়েছে। আমি এলাকার উন্নয়ন চাই। আমি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে আছি।

কল্যাণীর যুগ্ম বিডিও সুরঞ্জন বিশ্বাস জানান, কাজটা তো পিএইচইর। লকডাউনে বিডিও অফিস, পিএইচই খোলা আছে ঠিকই। কোথাও হয়তো লাইনে ফাটা বেড়িয়েছে, তাই লাইনটা আবার ওরা বন্ধ করেছে। ওদের সঙ্গে কথা বলার পর ওরা কাজ শুরু করেছে। ওরা করে দেবে বলেছে। পিএইচ ই বলেছিল যে ওরা বুধবারের মধ্যে লাইনটা করে দেবে, সে কারণে আমি গ্রামবাসীদের জানিয়েছিলাম শুক্রবারের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে, দেখা যাক পিএইচই আজকের মধ্যে কতটা কি করতে পারে। না হলে কাল পরশু আবার ধরে করাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *