গলসীর-১ নং ব্লকের পারাজে সাপের উপদ্রব, এক মাসে তিন জনের সর্পাঘাতে মৃত্যু, আতঙ্কিত এলাকাবাসী

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৪ সেপ্টম্বর: বর্ষার মরশুমের অন্তিম লগ্নে অবিরাম বৃষ্টি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। জলাজমি, চাষজমি থেকে সাপ উঠে আসছে লোকালয়ে। ঘটছে সর্পাঘাতের ঘটনা। গত একমাসে গলসী-১ নং ব্লকের পারাজ পঞ্চায়েত এলাকায় সর্পাঘাতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। সাপের হাত থেকে রেয়াত পেতে সচেতনতার উদ্যোগ নিয়েছে গলসী-১ নং ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। 

ঘটনায় জানা গেছে, গত দিন কুড়ি আগে পারাজ পঞ্চায়েতের বোলপুর গ্রামে সর্পাঘাতে এক মহিলার মৃত্যু হয়। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মৃতার নাম মমতা বাগদী (৩৭)। রাতে বিছানায় তাকে সাপে কামড় দেয় বলে অভিযোগ। পরে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। কিছু দিন পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। তার আগে ওই পঞ্চায়েতের সীগ্রামে ছন্দারানী বাগদী (৪৫) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। বাড়ির খামার বাড়িতে খড় আনতে গিয়েছিল তিনি। সেখানে তাকে সাপে কাটে বলে অভিযোগ। পরে তাকে পুরষা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার অবস্থার অবনতি হলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। দিন দশেক আগে ওই পঞ্চায়েতের কড়কডাল গ্রামে উদয় বাগদী (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, দুপুর নাগাদ জমিতে চাষের কাজ করার পর পুকুরে হাত পা ধুতে গিয়েছিল। পুকুরে নামার আগে রাস্তায় তাকে সাপে কামড় দেয় বলে অভিযোগ। পরিবারের লোকজন তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে পর পর সর্পাঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বর্ষায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে। লোকালয়ে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। তাতেই আতঙ্কের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

গলসী-১ নং ব্লকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ফারুক হোসেন বলেন, “বিষাক্ত সাপের শরীরে বৃষ্টির জল পড়লেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। আবার কখনও চাষ জমিতে কিটনাশক দেওয়ার ফলে প্রাণ বাঁচাতে সাপ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে মানুষকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।” তিনি বলেন,”হিমো টক্সিন বাইট ও নিউরো টক্সিন বাইট দুধরনের সাপের কামড়ে হয়। কিছু সাপের কামড়ে রক্ততঞ্চন করে দেয়। আবার কিছু সাপের কামড়ে কিডনি ফেলিওর করে দেয়। তবে সর্পাঘাতের ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পুরষা ব্লক হাসপাতালে আশপাশের আরও দুটি ব্লকের রোগী আসে। চলতি বছর মাসে গড়ে ৩০-৪০ জন সাপে কাটা রোগী এসেছে। অ্যান্টি ভেনাম পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর পরিস্থিতি অবনতি হলে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।” তিনি বলেন,
“হাসপাতালে সাপের কাটলে দ্রুত কি করা উচিত সেসব সম্পর্কে সতর্কিকরণ বোর্ড লাগানো হয়েছে। এলাকায় সচেতনতার শিবিরও করা হয়। তবে সর্বোপরি, মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাড়ি আশপাশে ঝোঁপ জঙ্গল পরিস্কার রাখা দরকার। বাড়ির বা পাঁচিল, দেওয়ালের ফাটল, গর্ত ভরাট করা দরকার। যাতে সাপ ওইসব জায়গায় আশ্রয় নিতে না পারে। রাত্রে মশারি ব্যাবহার অবশ্যই জরুরি।” 

পারাজ পঞ্চায়েত প্রধান শাজাহান শেখ বলেন, “১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, স্কুল চত্ত্বর সব পরিস্কার করা হয়। ভিসিডি টিম নিয়মিত কিটনাশক ছড়ানোর কাজ করে। গ্রামে সচেতনতার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *