কিন্নরে লকডাউনে আটকে বাংলার পর্যটকরা, আত্মীয়র মতো তাঁদের পাশে বৈশালি ডালমিয়া

চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ৬ এপ্রিল: পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের নিয়ে কিন্নর বেড়াতে গিয়েছিলেন হাওড়ার বালির তর্কসিদ্ধান্ত লেনের পিয়ালি মিত্র। জানতেন না, হঠাৎ ডাকা লকডাউন তাঁদের ফিরতেই দেবে না। দিশাহারা পিয়ালিদেবী ও তাঁর সঙ্গীদের মাথায় এই চরম বিপদে আকাশ ভেঙে পড়েছিল। ফোনে নানা জায়গা থেকে সাহায্য চেয়ে তাঁরা যখন ব্যর্থ হন, সেই সময় আত্মীয়ের মতো তাঁদের পাশে দাঁড়ান বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়া। তাঁর পর্যাপ্ত সাহায্য পেয়ে এখন বৈশালি ডালমিয়াকে ভগবানতুল্য মানুষ বলেই মনে করছেন বালির ওই বাসিন্দা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি খোলাখুলি সেকথাই জানিয়েছেন।

এই ব্যাপারেে পিয়ালিদেবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কালকায় আছি। কালকা থেকেই আমাদের ট্রেনে ফেরার কথা ছিল। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদে পড়ি। ফোন হাতড়ে যতজন পরিচিতকে পেয়েছি, খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো ফোন করেছি। আমাদের এই দলে কয়েকজন বয়স্ক মানুষও আছেন। তাঁদের নিয়ে আরও সমস্যা। কিন্ত, আত্মীয়-পরিজন বলুন বা স্থানীয় কাউন্সিলর, কারও থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। অনেককেই ফোন করেছিলাম। তার মধ্যে একজন বলল বৈশালি ডালমিয়াকে ফোন করতে। আমরা ছাপোষা মধ্যবিত্ত, রাজনীতি করি না। তাই বৈশালি ডালমিয়া আমাদের এলাকার বিধায়ক হলেও কোনও পরিচয় ছিল না। কিন্তু, উপায় না-পেয়ে ওই পরিচিত ভদ্রলোকের কথায় ভরসা করে ফোন করেছিলাম। তার পর উনি আমাদের জন্য যা করলেন, ওঁনাকে মানুষ বলা যায় না, ভগবান!’

এই ব্যাপারে বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে একজন মেদিনীপুর থেকে ফোন করেছিলেন। উনি জানান, আমার এলাকার কিছু লোক কালকায় আটকে আছেন। আমি বললাম ঠিক আছে, কী করতে পারি দেখছি, আমাকে ফোন করতে বলুন। এর পরই পিয়ালি মিত্র ফোন করেন।

ওঁর থেকে শুনলাম, ওঁদের টাকা-পয়সা পয়সা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। একটা হোটেলে একটাই ঘরে গাদাগাদি করে সকলে আছেন। টাকা দিতে না-পারায় হোটেলের কর্মীরা রাতে খেতেও দিতে চাইছেন না। আমি শুনেই বললাম, হোটেলের ম্যানেজারকে ফোনটা দিন। ম্যানেজারকে বললাম, যা টাকা লাগে আমি দেব। আপনাদের অ্যাকাউন্টে আমি টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি। আপনারা ওঁদের আরও ঘর দিন। খাবারের যেন অভাব না-হয়। হোটেল ম্যানেজার আমার কথা মেনে নেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওঁদের টাকা পাঠিয়ে দিই। সেই দিন থেকে গোটা দলটাকে দুটো ঘর দেওয়া হয়েছে। সেই রাত থেকেই খাবারও দেওয়া হচ্ছে। আমি এতদিন পর্যন্ত ওই হোটেল যা যা বিল হয়েছে, সব মিটিয়ে দিয়েছি। লকডাউন উঠলেই ওঁদের ফিরিয়ে আনব। ওঁরা ট্রেনে ফিরতে চাইছিলেন। আমি বলেছি দরকার নেই। আবার কী হয় না হয়! ১৫ এপ্রিল ভোরে ইন্ডিগোর ফ্লাইট বুক করা আছে। পয়লা বৈশাখের দিনই আমি ওঁদের এখানে নিয়ে আসব।’

বৈশালিদেবী জানান, শুধু এই ঘটনাই নয়। হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণায় অসংখ্য মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন। আমরা তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। যেমন, বেলুড়ে কাজ করতে এসে ওড়িশার ৩৫০ শ্রমিক আটকে আছে। ওড়িশা সরকার যোগাযোগ করেছিল। আমি এলাকার ব্যবসায়ীদের বলে ওঁদের বিভিন্ন গুদামে ওই সব শ্রমিকদের ‘ডিসট্যান্স’ মেনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। খাবার-জল, যাবতীয় ব্যবস্থাও করেছি।’

পিয়ালি মিত্র এতকিছু জানেন না। কিন্তু, স্থানীয় বিধায়কের থেকে তিনি যা সাহায্য পেয়েছেন, তাতে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে তাঁর ধারণাই বদলে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে ফোনে তিনি মনের কথাটা বলেই ফেললেন, ‘আমি চাই বৈশালি ডালমিয়া যেন চিরকাল আমাদের বিধায়ক থাকেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *