বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েতেও সদস্যদের চরম বিরোধিতায় পুরুলিয়ার ঝালদা-দড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নিখোঁজ!

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৬ ডিসেম্বর: ঝালদা ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত ঝালদা-দড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিখোঁজ। এই ঘটনা সংক্রান্ত নেতা ও এক সদস্যের একটি মোবাইলের কথোপকথন ভাইরাল হয়ে যায়। আর এতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায়।
পঞ্চায়েত সুত্রে খবর, ২০-২২ দিন ধরে পঞ্চায়েতের প্রধান বিজয় লায়া পঞ্চায়েত অফিসে আসছেন না। বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০-২২ দিন আগে পঞ্চায়েত অফিসে যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু অফিসে যাননি। আর বাড়িতেও ফিরে যাননি তিনি। প্রধানের বাবা কার্তিক লায়া বলেন, আমরা চাই আমাদের ছেলে বাড়িতে ফিরে আসুক। দলের সমস্যার জন্য এই পরিস্থিতি। বিজয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য থানায় কোনও নিখোঁজ ডাইরি করা হয়নি।

জানা যায়, তার প্রায় ২ মাস আগে পঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দা আরটিআইয়ের মাধ্যমে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন প্রধানকে। তারপর থেকেই তিনি ঠিকমতো অফিসে আসছিলেন না। গত মাসের ১৬ তারিখে ঝালদা ব্লকের বিডিওকে লিখিতভাবে পারিবারিক ও শারীরিক অসুস্থতা থাকায় পঞ্চায়েতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। পঞ্চায়েতের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিডিও প্রধানকে তার বাড়িতে চিঠি দিয়ে গত ৮ তারিখ ব্লক অফিসে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আসেননি।

এই ঘটনার পরেই একটি অডিও টেপ ভাইরাল হয়। সেখানে দলের এক অঞ্চল সভাপতি যুধিষ্ঠির মাহাতো পঞ্চায়েতের এক সদস্য তরণী রুইদাসকে বলতে শোনা যায়, আমরা আর কোনো ভাগ (বাটা) দেবো না। ওদের সঙ্গে কেউ নেই। ওকে কাল পর্যন্ত আসার সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ও আসেনি। আমরাই ঠিক করবো কাকে কোন পদে রাখা হবে। জুনিয়র স্কুলের মাঠে গোপন মিটিংয়ের আসার জন্যে বলতে শোনা যায় যুধিষ্ঠির মাহাতোকে এবং ঝালদার একটি রিসোর্টে প্রধান রয়েছে বলেই এই কথোপকথনে জানা যায়। (যদিও এই অডিওর সত্যতা যাচাই করা হয়নি)। ফলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল।

প্রধান নিখোঁজের ঘটনায় জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো কী কারণে প্রধান অনুপস্থিত আছেন। অনেক কারণেই অনুপস্থিত থাকতে পারেন। যদি দেখা যায় উনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত রয়েছেন। তখন পঞ্চায়েত আইনে যা বলা আছে তাই হবে।

ঝালদা দড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৩। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল অনুযায়ী এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস ৯, বিজেপি ৩, কংগ্রেস ১টি আসন পায়। এই পঞ্চায়েতের প্রধান আসনটি তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। তৃণমূল কংগ্রেসের তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায় ভুক্ত কোনও জেতা সদস্য না থাকায় বিজেপির ২ জন সদস্যকে নিজেদের দলে যোগদান করায়। তাদের মধ্যেই বিজয় লায়া ১ জন তিনি তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায় হওয়ার ফলে তিনিই প্রধান নির্বাচিত হন। ঠিকঠাক চলছিল গত ৪ মাস আগে বাকি বিরোধী ২ সদস্যও তৃণমূলে যোগদান করেন। ফলে বিরোধী শূন্য হয়ে পড়ে এই পঞ্চায়েতে। আপাতত উপপ্রধান শেখ সাহেজমালকে প্রধানের কাজের ভার দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *