সাথী দাস, পুরুলিয়া, ৩০ জানুয়ারি: তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চরমে এখন জেলাজুড়ে। প্রকাশ্যে দুই গোষ্ঠীর লড়াই। মূলত ক্ষমতা জাহির আর অফিস দখল এখন নিত্য দিনের ঘটনা দেখা দিয়েছে জেলায়। শ্রমিক সংগঠন আর তৃণমূল মাদার সংগঠন এখন গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরবার। গতকাল রাতে পুরুলিয়া শহরের কাছারি রোডে অবস্থিত আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত জেলা ম্যাক্সি টেক্সি ইউনিয়নের অফিস দখল নিয়ে বচসা হয় দুই পক্ষের মধ্যে। চরম উত্তেজনা দেখা দেয় সেখানে। একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
আইএনটিটিইউসি’র পুরুলিয়া শহর নতুন সভাপতি হয়েছেন কাজল ব্যানার্জি। সংগঠনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতে কাছারি রোডে অবস্থিত ওই কার্যালয়ে যাতায়াত করতেই আপত্তি তোলেন ওই কার্যালয়ের দখলে থাকা জনৈক যুবের আলী। তাঁর দাবি, “তৃণমূল নেত্রীকে দেখে বাম আমল থেকে লড়াই করে সংগঠন করেছি। এই অফিস তিল তিল করে গড়ে উঠেছে। এখানে কোনও মতেই নতুন কেউ দখল নিতে পারবে না। কাজল ব্যানার্জি জোর করে তালা মেরে দেয় এই অফিসে। এছাড়া সংগঠনের পতাকা সরিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ২৬ জানুয়ারি। সংগঠনের কোনও কাজই জানেন না নতুন শহর সভাপতি।” জুবের আলীর অনুগামীদের দাপট থাকায় রাতে এলাকা ছাড়েন নব নিযুক্ত আইএনটিটিইউসির পুরুলিয়া শহর সভাপতি।
জানা গিয়েছে, ওই অফিসের কাছেই একটি হাট বসে। ওই অফিসের একাংশে সবজি বিক্রেতারা ভাড়ার বিনিময়ে মাল পত্র রাখেন। এটার দখল নিয়েই লড়াই দুই পক্ষের। এই খবর রাতেই পোঁছে যায়
আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমারের কাছে। তাঁর পৌরহিত্যে আজ দুই পক্ষকে নিয়ে এক প্রস্থ বৈঠক হয় পুরুলিয়া শহর লাগোয়া বেলগুমা এলাকায় জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ে। সেখানে জুবের আলীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়, সংগঠনের যে কোনও দিন সভাপতি থাকবেন। কাজ করবেন। উজ্জ্বল কুমার বলেন, “দলের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, তৃণমূলের ‘দিদির দূত’ কর্মসুচিতে স্থানীয় বিধায়কের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল ঝালদায়। বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা কর্মী এমন কি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে উপেক্ষার অভিযোগ তুললেন দলীয় কর্মীরা। বিক্ষুব্দ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা সম্মেলনের ডাক দিলেন। ‘ঝালদা দঁড়দা অঞ্চল বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি’ নাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে এল ঝালদা ১ নং ব্লকের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব।
বিষয়টি নিয়ে আজ ঝালদা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সম্পাদক সেখ কবির জানান, যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য সর্বস্ব দিয়েছেন, যাঁদের পরিশ্রমে আজ তৃণমূল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এলাকায় আজ তাদের মর্যাদা নেই দলে। যাঁরা নতুন নতুন দলে যোগদান করেছে আজ তারাই জায়গা পাচ্ছেন মিটিং মিছিলে ও পদে।” তিনি আক্ষেপের সঙ্গে আরও জানান, কয়েকদিন আগে ঝালদা দঁড়দা অঞ্চলে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতেও স্থানীয় অঞ্চল সহ সভাপতি সেখ সাহেজামাল সহ পঞ্চায়েতের দলের পঞ্চায়েত কয়েকজন সদস্য তথা আমাকেও জানানো হয়নি। এখানে পুরোপুরি মদত রয়েছে আমাদের বাঘমুন্ডির বিধায়কের। বিষয়টি বার বার জানানো হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। কোনো সুরাহা হয়নি। তাই আমরা ঝালদা দঁড়দা অঞ্চলের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে ৬ই ফেব্রুয়ারি ঝালদা নয়ামোড়ে কর্মী সম্মেলনের ডাক দিয়েছি, কর্মীদের উৎসাহ দিতে।”