নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের দেবী দশভূজা হয়েও দ্বিভূজা

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১৯ সেপ্টেম্বর:
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের দেবী দশভূজা হয়েও দ্বিভূজা। মোগল আমলে এই পুজো হত বাংলাদেশের যশোরে। পরবর্তীকালে দেশভাগের পর যশোরের সেই জমিদাররা চলে আসেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে তারপর থেকে বংশানুক্রমে হয়ে আছে এই পূজা।

এমনই এক শরৎকাল। মোগল বাদশা জাহাঙ্গীর অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোর জেলার মহেশপুরের জমিদারের আনুগত্যে খুশি হয়ে রায়চৌধুরী উপাধি দিলেন। উপাধি লাভের আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে মহেশপুরের জমিদার, বড়সরকার আয়োজন করলেন দ্বিভুজা দুর্গা পুজোর। তিন দিন ধরে চলল মণ্ডামিঠাই বিতরণ। আলো আর আতসবাজির রোশনাইয়ে ভেসে গেল মহেশপুর। চারদিকে ধন্য ধন্য রব। সেই শুরু। তারপর সব ইতিহাস।

নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের দেবী দ্বিভূজা হলেও তিনি দশভূজা। আসলে বাইরে থেকে দেখা যায় শুধু মাত্র দুটি হাত, অন্য আটটি হাত আঙুলের মতো চুলের আড়ালে ঢাকা। তাই নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালী গ্রামে রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা প্রতীমা এখানে দ্বিভূজা নামে পরিচিত। ওপার বাংলা ও এপার বাংলা মিলিয়ে ধারাবাহিক ভাবে ৩২০ বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো। এবাবও রায়চৌধুরী বাড়িতে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমানে বাংলাদেশের যশোর জেলার মহেশপুর গ্রামে এই রায় চৌধুরীদের আদিনিবাস ছিল। দেশভাগের সময় এই বাড়ির সদস্যরা নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার পাবাখালীতে চলে আসেন বিনিময়ের মাধ্যমে। মহেশপুর থেকে পাবাখালীর দূরত্ব মাত্র পঁচিশ কিমি হলেও, বর্তমানে সে ব্যাবধান দুটি দেশের।

প্রথা অনুযায়ী আজও দেবী দুর্গার কাঠামো পুজো হয় রথযাত্রার দিন। বাড়ির কর্তা পিনাকিপ্রসাদ রায়চৌধুরী জানান, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পুজোটি আমাদের পরিবারের সদস্যরা করতেন। তিনারা এই দেশে আসার পর একই ভাবে, একই নিয়মে সেই পূজা শুরু করেন। একসময় জমিদাড়ি বৈভব হারালেও, পুজোয় নিষ্ঠার কোনও খামতি নেই। শুধু প্রতিমা তৈরিতে নয়, সাধারণ বাড়ির পুজো থেকে এই বাড়ির নিয়মে রয়েছে অনেক ফারাক।

ষষ্ঠীর দিন হোমের আগুন জ্বলে, নেভানো হয় দশমীতে। সঙ্গে চলে চারদিন ধরে চন্ডীপাট। এক চালার প্রতিমা, দেবীর এক হাতে ত্রিশূল অন্য হাতে সাপের লেজ। প্রথা অনুযায়ী ভোগ দেওয়া হয় চারবার। সকালে পাঁচ রকমের ভাজা সহ কলাই ডালের খিচুড়ি, সঙ্গে ফল ও মিষ্টি। দুপুরে অন্ন ভোগ। বিকালে পরমান্ন ভোগ। রাতে লুচি, সুজি, সন্দেশ। ওপার বাংলার সন্ধিপুজোতে কামানের গর্জন শোনা গেলেও এপার বাংলায় কামানের কোনও অস্তিত্ব নেই। এখন সন্ধিপুজায় ছোড়া হয় বন্দুকের গুলি। দশমীতে আবার ভোগ হয় পান্তা ভাত ও শিবের জন্য গাঁজা।

আজোও প্রথা মেনে বিজয়া দশমীতে কাঁধে করে প্রতিমা বহন করে শিবনিবাসে চূর্ণী নদীতে বিসর্জিত হয় দ্বিভূজা দুর্গাপ্রতিমা। সঙ্গে চলে মিষ্টি মুখ। এই প্রাচীন পুজো দেখতে প্রতি বছরই ভিড় জমান অগণিত মানুষ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *