দু’মাসের কন্যাসন্তানকে মেরে ম্যানহোলে, খুনের অভিযোগে গ্রেফতার মা

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৭ জানুয়ারি: কথায় আছে, কুপিতা যদিও হয়, কুমাতা কখনো নয়। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে সমস্ত প্রবাদই যেন মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। বিদেশে এরকম ঘটনার প্রমাণ থাকলেও দেশেও এরকম ঘটনার নজির নেই। কিন্তু সমস্ত হিসেবকে উলটে দিয়ে যেন সেটাই করে দেখালেন বেলেঘাটার সন্ধ্যা মালো। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন নিজের দু’মাসের শিশুকন্যাকে খুন করে ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল অভিযুক্ত মা সন্ধ্যা মালোকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার বেলেঘাটায় পুলিশের ইএসডি ডিভিশনের সদর দফতরের কাছে একটি বহুতলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। যদিও তাঁর শিশুকন্যা চুরি হয়েছে বলে নিজেই বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। কিন্তু ঘটনার তদন্তে নেমে একাধিক অসঙ্গতি পায় পুলিশ। তারপর শিশুটির মা-কেই ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। শুকনো ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির দেহ।

পুলিশ জানতে পেরেছে, বাড়িতে মহিলার শিশুকন্যাকে দেখাশোনার জন্য আয়াও ছিল। এ দিন ওই মহিলা শিশুকন্যার আয়ার সঙ্গে বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে আয়া কিছুক্ষণের জন্য ছাদে গিয়েছিলেন। পরে মহিলার শ্বশুর নিচে এসে দেখেন, পুত্রবধূ আচ্ছন্ন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন আর ঘরে শিশু নেই। সে সময়ে আয়াও ছাদ থেকে নেমে এসে চিৎকার করতে শুরু করেন।

সন্ধ্যা প্রথমে দাবি করেছিলেন, আয়া ছাদে যাওয়ার পরে কলিং বেল বেজেছিল। সন্ধ্যা দরজা খুলে দেখেন, বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক যুবক। তিনি বলেন, আয়া ছাদের দরজার চাবি চাইছেন। সন্ধ্যা পিছনে ঘুরতেই ওই যুবক ধাক্কা মেরে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

কিন্তু প্রথম থেকেই এই বয়ান নিয়ে সন্দেহ ছিল পুলিশের। পুলিশের প্রশ্ন ছিল, বাইরে থেকে আসা এক যুবক কী ভাবে জানল, যে আয়া ছাদে গিয়েছে? আয়ার ছাদের চাবি দরকার হলে তিনি নিজে না এসে অন্যকে পাঠাবেন কেন? আর বেলেঘাটা থানার সামনে বহুতল থেকে শিশুটিকে নিয়ে পালানোর ঝুঁকি কেন নেবেন ওই যুবক?

এরপরে পুলিশ ক্রমাগত জেরা শুরু করে ওই মহিলাকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। তদন্তকারীদের দাবি, সন্তানকে খুন করে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন সন্ধ্যা। তারপর নিজেকে বাঁচাতে মনগড়া গল্প বানিয়ে সকলকে বলেছেন। কিন্তু তার বয়ানে অসঙ্গতির সূত্র ধরেই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এই ঘটনার রহস্যের কিনারা করে ফেলল পুলিশ।
ওই মহিলার একটি ছেলেও রয়েছে। তবে, কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য খুন নাকি অন্য কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here