
আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২ জানুয়ারি: বীরভূমের গর্ব তারাপীঠের দিশা। অল ইন্ডিয়া মাস ওয়ামা কেওকুশিন ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। এতো বড় সাফল্যের পরও সরকারিভাবে কোনও সম্বর্ধনা বা উৎসাহ দেওয়া হয়নি তাকে। তাতে কোনও ক্ষোভ নেই তার। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে সম্বর্ধনা দিলেন রামপুরহাটের দুই যুবক। সেই সঙ্গে আগামী দিনে তাকে আরও বড় জায়গায় যাওয়ার অনুপ্রেণা দেন তারা।
দিশা লেট। তারাপীঠ তারাতীর্থ বিদ্যামন্দিরের মেধাবী ছাত্রী সে। শুধু পড়াশোনাতেই নয়, বছর দুয়েকের মধ্যে ক্যারাটে প্রতিযোগিতাতেও একাধিক পুরস্কার ঘরে তুলেছে। বাবা তারাপীঠের ব্যবসায়ী সন্তোষ লেট এক সময় ক্যারাটে শিখতেন। কিন্তু সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে আর শেষ পর্যায়ে যেতে পারেননি। দুই মেয়ের মধ্যে ছোট দিশা বাবার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। মা কবিতা লেট গৃহবধূ। মেয়েকে উৎসাহ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেন না। তবু নিজের অদম্য জেদে মাত্র দু’বছরে সে ১২-১৪ বছর বয়সের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় ভারত সেরার সম্মান ছিনিয়ে নিয়েছে।
ক্যারাটে শিক্ষক অভিজিৎ লেট বলেন, “২০১৮ সালে প্রথম আমার কাছে ক্যারাটে শিখতে আসে। ওর চোখেমুখে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। তাই কয়েকমাস শিখিয়ে রাজ্য স্কুল প্রতিযোগিতায় নিয়ে গিয়েছিলাম সল্টলেকে। সেখানে দ্বিতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়। ওই বছরই হুগলীতে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশানাল কেওকুশিন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ানশিপে প্রথমস্থান অধিকার করে ওয়ামা কাপ জিতে নেয়। ২০১৯ সালে ইন্টার ষ্টেট কেওকুশিন ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এবার অল ইন্ডিয়া মাস ওয়ামা কেওকুশিন ক্যারাটেতে প্রথম স্থান অধিকার করে সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। আগামী দিনে ওয়ার্ল্ড কাপ কিংবা এশিয়া কাপে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি”।
মেয়ের সাফল্যে গর্বিত মা কবিতা লেট। তিনি বলেন, “বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে চলেছে মেয়ে। ভালো লাগছে”। এদিন দিশাকে সম্বর্ধনা দিলের রামপুরহাটের দুই যুবক পার্থপ্রতিম গুহ এবং সুমন বল মজুমদার। তারা বলেন, “দিশা আমাদের গর্ব। তাই খবর পেয়েই আমরা তার তারাপীঠের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছি। আমরা ওকে আরও বড় জায়গায় দেখতে চাই”। নিজের জেলায় সম্বর্ধনা পেয়ে খুশি দিশা। সে বলে, “এই সম্বর্ধনা আমাকে আরও উৎসাহিত করবে। আমি মনে করি সমস্ত মেয়েদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। কারণ সমাজের কিছু কীট, দুষ্ট রক্ত চক্ষু উপড়ে ফেলতে নিজের সুরক্ষার জন্যই মেয়েদের এগিয়ে আসা উচিত”। সব শেষে সে জানায় তার স্বপ্ন অনেক দূর। তারাপীঠের মানুষও মনে করে দিশা একদিন দিশা দেখাবে।