আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৫ জানুয়ারি: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কাছে জমি ফেরত দেওয়ার চিঠি পৌঁছনোর পরই বিস্ফোরক বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
ফের নাম না করে অমর্ত্য সেনকে নিশানা করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ ‘জমি কব্জা করলেও রাবীন্দ্রিক’, বুধবারের উপাসনা গৃহে বসে ভারতরত্ন প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন উপাচার্য। উপাচার্যের মন্তব্য ও অমর্ত্য সেনের কাছে জমি ফেরত চেয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের চিঠি প্রসঙ্গে নিন্দায় সরব ঠাকুর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা৷
শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহে প্রতি বুধবার বিশেষ প্রার্থনার ঐতিহ্য রয়েছে। এদিন সকালে বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহে আচার্য রূপে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য। উপাসনাগৃহে উপাসনার প্রাসঙ্গিকতার উদাহরণ দিতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে জমি দখল করে রাখলেই সে রাবীন্দ্রিক। উপাচার্যকে গালিগালাজ দিতে পারলে সেও রাবীন্দ্রিক। অন্যায় করলে রাবীন্দ্রিক। বিশ্বভারতীকে অপমান করতে পারলে সেই ব্যক্তিও রাবীন্দ্রিক।’ মঙ্গলবারই জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলে চিঠি দেওয়া হয়েছে অমর্ত্য সেনকে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বিশ্বভারতীতে আছেন বলেই হাতে চিঠি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও ওই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নোবেলজয়ী। আর বুধবার সকালেই ‘রাবীন্দ্রিক’ শব্দের ব্যাখ্যা দিলেন উপাচার্য।
উপাসনা গৃহে তিনি দাবি করেন, তিনি না এলে পড়ুয়ারা উপাসনা গৃহে আসেন না। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিশ্বভারতীতে উচ্চশিক্ষিত মানুষ যেমন আছেন, সেরকমই অশিক্ষিত মানুষও আছেন। অল্পশিক্ষিত মানুষ তো সবথেকে বেশি ক্ষতিকারক। তাই এ সমস্ত মানুষদের কাছে রাবীন্দ্রিক কথার আসল অর্থ পাবেন না।’ তাঁর কথায়, ‘শান্তিনিকেতনে বসবাসকারী রাবীন্দ্রিক মানেই স্বার্থসিদ্ধির সোপান।’ যদি উপাসনা গৃহে কেউ না আসেন, তাহলে ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহ বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন উপাচার্য।
যদিও উপাচার্যর বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “উনি (উপাচার্য) একাই রাবীন্দ্রিক, বাকি কেউ কিছু জানেন না৷ উনি শান্তিনিকেতন সম্পর্কে কিছুই জানেন না, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কতটা জানেন সন্দেহ আছে৷ অমর্ত্য সেন একজন সনামধন্য ব্যক্তি, আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁকে এই ভাবে হেনস্থা করা খুবই অন্যায়।”
পাশাপাশি এই ইস্যুতে পড়ুয়াদের মধ্যে শুভ নাথ বলেন, “উপাচার্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই চিঠি দিয়েছেন৷ এই কাজ উনি আগেও করেছে। উপাচার্যের মাথার ঠিক নেই। তাই একজন বিশিষ্ট মানুষকে জমি ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।”
প্রাক্তনীদের মধ্যে নুরুল হক বলেন, “আমর্ত্য সেন জমি দখল করে থাকলে উপাচার্য কেন আইনের সাহায্য নিচ্ছেন না৷ পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে যে উপাচার্য সব সময় মামলা করতে পারেন, তিনি কেমন মানুষ সেটা বোঝা যায়৷ উনি রাবীন্দ্রিকের মাপকাঠি ঠিক করে দেবেন নাকি।”
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। শুধু অভিযোগ তোলা নয়, অবিলম্বে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদনও করা হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে। কর্তৃপক্ষের দাবি, অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা দখল করে রেখেছেন। সমীক্ষার মাধ্যমে নাকি এমনটা জানা গিয়েছে। এটা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ বলে দাবি করেছেন অমর্ত্য সেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, আইনজীবীই চিঠির উত্তর দেবেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন অমর্ত্য সেনের দাদু পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন। তাই তাঁকে বসবাসের জন্য আশ্রম সংলগ্ল এলাকায় একটি জমি দেওয়া হয়েছিল। শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়িতে বসবাস করতেন ক্ষিতিমোহন সেন। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে আশুতোষ সেন, বর্তমানে এই বাড়িতে থাকেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। এমনকি, ‘অমর্ত্য’ নামকরণ স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছিলেন৷ আরও বলা যায়, বিশ্বভারতীকে বহু জমি দান হিসাবে দিয়েছে সেন পরিবার৷