আমাদের ভারত, ২১ জুলাই: শহিদ দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আসলে হতাশায় ভুগছেন। আমফান থেকে লকডাউন সবকিছুতেই তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের চুরি মানুষ ধরে ফেলেছেন। এইসব দেখে উনি এখন ব্যর্থতার হতাশায় ভুগছেন। তাই উনি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের বহিরাগত বলছেন আর রোহিঙ্গাদের ঘরের লোক বলে মনে করছেন।
আজ একুশে জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি তাঁর বক্তব্যের বেশিরভাগ সময় জুড়েই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ২১শে বিজেপিকে শূন্য করে দিয়ে, তৃণমূল কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় আসবে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, আসলে মুখ্যমন্ত্রী জেগে স্বপ্ন দেখছেন। তার আগের কথাবার্তা এবং আজকের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি হতাশায় ভুগছেন। তাঁর নিজের ব্যর্থতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তৃণমূলের নেতাদের লাগামছাড়া চুরি। তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি জনগণ হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন। উনি এবং ওঁনার দলের সকলেই জানেন যে ২০২১ এ তৃণমূলের ক্ষমতায় ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি শ্লোগান তুলে ধরে সুকান্তবাবু বলেন, আমাদের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ১৯এ হাফ ২১এ সাফ। এই কথা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা দিচ্ছি। সবকিছু বুঝেও উনি কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ওঁনার ফের ক্ষমতায় আসার এই স্বপ্ন আমরা যারা বিজেপির কার্যকর্তা আছি তারা কিছুতেই সফল হতে দেব না।
কেন্দ্রের সাহায্য না করার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট সাহায্য করছে। আমফানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী চলে এসেছিলেন। তাই নয়, প্রথম পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকাও দিয়েছিলেন কিন্তু সে টাকা কোথায় গেল? তাঁর অভিযোগ, সেই টাকা গেছে যাদের ঘর ভাঙ্গেনি, পাকা বাড়ির অধিকারী এবং পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী ও আত্মীয়দের একাউন্টে। জনগণ সেটা বুঝতে পারছে। তাদের কাছে পরিষ্কার কেন্দ্র যে টাকা দিচ্ছে তা তৃণমূল কংগ্রেস চুরি করে নিচ্ছে। সেই জন্য বুথ স্তরের সভাপতি থেকে তৃণমূলের নেতা, কর্মী এবং সর্বোচ্চ নেত্রী পর্যন্ত কাউকেই আর বাংলার জনগণ বিশ্বাস করে না। প্রত্যেকে বুঝে গেছে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যা ছাড়া সত্য কথা বলেন না। তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এঁদের কথা নিয়ে খুব একটা চিন্তা-ভাবনা করে না।
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে বহিরাগত বলায় তারও তীব্র সমালোচনা করে সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন তুলেছেন, কে বহিরাগত? নরেন্দ্র মোদী, অমিত সাহ, আর কলকাতা যে অবাঙালিরা বাংলাকে সমৃদ্ধ করছে তাঁরা বহিরাগত? আর রোহিঙ্গারা ঘরের লোক? এই রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে রাজ্যে ঢুকেছে। জামাতের হয়ে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। তারা ঘরের লোক হয়ে গেল? মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের লোক ভারত বর্ষ চালাচ্ছে, ঠিক সেইভাবে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের কোনও ভূমিপুত্র এই রাজ্য চালাবে। এই রাজ্যকে ব্যানার্জি পরিবারের জমিদারি হতে দেব না। মমতা ব্যানার্জির পৈতৃক সম্পত্তি করতে দেব না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে অপরাধীদের এনকাউন্টারের প্রসঙ্গ তুলে যোগী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। সেই প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ বলেন, এই রাজ্যে একের পর এক খুন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে কিন্তু এখানে অপরাধীরা সাজা পায় না। তিনি সাংসদ হওয়ার পর গত এক বছরে উত্তরবঙ্গে একের পর এক রাজবংশী মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে জানান। বলেন, নির্ভয়া কাণ্ডের সমপরিমাণ অপরাধ হয়েছে এখানে। কিন্তু নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি হয়েছে, হায়দ্রাবাদের অপরাধীদের এনকাউন্টার করে মারা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যারা ধর্ষক তাদের সাজা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের জামাই আদর করা হচ্ছে। আসলে তারা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুধের গরু। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, আপনাকে অনুরোধ আপনি দুধেল গরু দেখেন এবং তার লাথি খান, আর পারলে উত্তর প্রদেশ থেকে দেখে শিখুন কি করে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হয়।