দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়

মিলন খামারিয়া।
আমাদের ভারত, কল্যাণী, ১৮ মার্চ: গো-পালন ও দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য, যেমন -ঘি, ছানা, পনির, লস্যি, খোয়াক্ষীর, দই, মিষ্টি প্রভৃতি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির। এই প্রশিক্ষণ দিল ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ‘ মোহনপুরস্থিত দোহ প্রযুক্তিবিদ্যা অনুষদ। রাজ্যের ১০ টি জেলা (নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও বর্ধমান) থেকে ৩০ জন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ করেছিলেন।১৩ মার্চ থেকে চলা পাঁচদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হল গতকাল।

প্রশিক্ষণ দেন গৌতম কুমার দাস, ড. অনিন্দিতা দেবনাথ, পার্থ প্রতিম দেবনাথ, কুমারেশ হালদার, ড. সুরজিৎ মন্ডল ও ড. পিনাকী রঞ্জন রায় প্রমুখ। গরু – মোষের পরিচর্যা, পুষ্টি, চিকিৎসা এবং খাঁটি ও স্বচ্ছ দুধ উৎপাদনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণীতে রাষ্ট্রীয় দুগ্ধ অনুসন্ধান সংস্থার (এন.ডি.আর. আই) পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় পাঠানো হয়! প্রশিক্ষণ নিতে আসা উদ্যোগীদের দুধে কী কী উপাদান থাকে সেই সম্পর্কে সচেতন করা হয়। ভেজাল দুধ থেকে বেছে নিয়ে বিশুদ্ধ দুধ চেনা ও দুধকে বিশুদ্ধ রাখার উপায় শেখানো হয়। দুধ থেকে বিভিন্ন দ্রব্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি করে তার বাজারজাতকরণ ও ব্যবসার পদ্ধতিও জানানো হয় এই শিবিরে।

গৌতম কুমার দাস বলেন, গরু বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকার করে থাকে। শাস্ত্রে উল্লিখিত সাত মাতার অন্যতম হল গো-মাতা। গো-মাতা আমাদের বিভিন্নভাবে প্রতিপালন করে থাকে। দুধ থেকে ক্রিম, ঘি, পনির, খোয়াক্ষীর, লস্যি প্রভৃতি দ্রব্য তৈরি করা হাতে -কলমে শেখান তিনি।

‘বিশ্বব্যাঙ্ক ও ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল হায়ার এডুকেশন প্রজেক্ট’ তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তারই অধীনে এই প্রশিক্ষণ শিবির চলছিল। এটি তাদের অষ্টম প্রশিক্ষণ শিবির।

কৃষি ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে আসতে চায় তাদের প্রশিক্ষিত করতেই মূলত এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের আয়বৃদ্ধি ও শিক্ষিত আগ্রহী যুবক যুবতীদের দুগ্ধজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন ও তার ব্যবসার মাধ্যমে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ শিবিরের বন্দোবস্ত করা হয়। মানুষ শুধুই চাকরি করবে না, সে নিজে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের যাতে ব্যবস্থা করতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা ও বিভিন্ন দিক দিয়ে শিক্ষা দিয়ে তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করতেই এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।

এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রজেক্ট এর প্রধান পর্যবেক্ষক ড. লোপামুদ্রা হালদার বলেন, “আমাদের রাজ্য ও দেশে দুগ্ধজাত দ্রব্যের চাহিদা ভীষণ পরিমাণে আছে। সেইজন্য আমরা চাইছি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষিতরা ব্যবসা করে নিজেরা স্বাবলম্বী হোক। শুধুই চাকরি করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেরা ব্যবসা করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব -এই প্রচেষ্টা করুক। তাতেই দেশের সমৃদ্ধি আসবে ও আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ে উঠবে।”

প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনায় বিশেষভাবে সহযোগী ছিলেন অমিত কুমার বর্মন, পার্থপ্রতিম দেবনাথ। প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন করেন ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের সল্টলেক স্থিত কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ ও গবেষণা সংস্থা (ICAR – ATARI) র নির্দেশক ড. প্রদীপ দে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য তপন কুমার মণ্ডল, দোহ প্রযুক্তিবিদ্যা অনুষদের অধ্যক্ষ প্রফেসর তরুণ কান্তি মাইতি। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে ল্যাক্টোমিটার, ডিজিটাল থার্মোমিটার,পরিমাপক মগ এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। নাবার্ড বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে ব্যবসা শুরুর জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য পাওয়া যেতে পারে বলেও জানা যায়।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here