
তপন ঘোষ, ২৮ ফেব্রুয়ারি: একটু আগে টিভিতে CNN News চ্যানেল দেখছিলাম। বিখ্যাত অ্যাংকর ভূপেন্দ্র চৌবে উত্তর পূর্ব দিল্লীতে দাঙ্গাপীড়িত এলাকা দেখতে গিয়ে একটা ছোট গলির ভিতরে এই ব্যারিকেড দেখতে পেলেন, যার একদিকে দাঁড়িয়ে হিন্দুরা, অন্যদিকে দাঁড়িয়ে মুসলমানরা। একই গলির ডানদিকে, বাঁদিকে। এই মুহূর্তে সেখানে কোন দাঙ্গা নেই, সংঘর্ষ নেই। কিন্তু আছে এই ব্যারিকেড।
এই ব্যারিকেড অত্যন্ত সিম্বলিক। বুদ্ধিজীবিরা জানে না, অনেকে জানলেও প্রকাশ্যে স্বীকার করে না, এই ব্যারিকেড সারা ভারতে আছে। কোথাও দুটো গ্রামের মধ্যে, কোথাও একই গ্রামের বা শহরের দুটো পাড়ার মধ্যে, কোথাও একই রাস্তার এপার আর ওপারের মধ্যে। এই ব্যারিকেডের একদিকে ভারত আর একদিকে পাকিস্তান। খবরের কাগজের হেডলাইনে, টিভির পর্দায়, সেমিনারে সিম্পোজিয়ামে, এই ভারত ও পাকিস্তানের কথা আপনারা জানতে পারবেন না। কিন্তু প্রত্যেকটি মিক্স পপুলেশন এলাকায় সাধারণ মানুষ জানে, হিন্দু জানে, মুসলমান জানে – এই ভারত পাকিস্তানের অস্তিত্বের কথা। এই বাস্তবতার কথা।
এই বাস্তবকে অস্বীকার করে, জেনেও না জানার ভান করে তৈরী হয় শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের ন্যারেটিভ। আর সেই ন্যারেটিভ দিয়ে তৈরী হয় রাষ্ট্র ও রাজ্য পরিচালনার নীতি। তাই সেই নীতি হয় বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন, অবাস্তব। আর সেইজন্যই দেশের অখন্ডতার সংকট এবং আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা জনিত সমস্যাগুলো সমাধান তো হয়ই না, বরং আরো বিকট রূপ ধারণ করে। তারই সামান্য ঝলক এবার দিল্লীতে দেখতে পেলাম। কিন্তু শুধু এবার? শুধু দিল্লীতে? একটু গুগল সার্চ করে দেখুন তো? ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে কত হাজার বার, কত হাজার স্থানে এ জিনিস ঘটেছে! সার্চ করুন “Communal riots in post Independence India”।
দেখুন সেগুলিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ও সম্পত্তিহানির পরিমাণ। আশ্চর্য্য হয়ে যাবেন। ভাবতে বাধ্য হবেন, তাহলে ভারত ভাগ করে কী লাভ হল? কোন্ সমস্যার সমাধান হল?
এই বাস্তবতাকে যতদিন অস্বীকার করে চলব, যতদিন ওই “সিম্বলিক ব্যারিকেড” টার বাস্তবতাকে বুঝতে পারব না, ততদিন এই দেশে শান্তি শৃঙ্খলা তো প্রতিষ্ঠিত হবেই না, বরং আবার দেশ ভাগের সম্ভাবনা থেকে যাবে। দেশের অখন্ডতা আবার বিপন্ন হয়ে পড়বে যে কোন সময়।
আসুন, সিএনএন নিউজ চ্যানেলে আজ দেখানো দিল্লীর এই “প্রতীকী ব্যারিকেডের” বাস্তবতা সারা দেশে আমরা চিহ্নিত করি। এবং দেশের অখন্ডতা বজায় রাখার জন্য যা করার তা করি।