বাসন্তী নবরাত্রির তৃতীয় দিনে সন্ধের আকাশে চাঁদের নীচে শুক্র গ্রহের রহস্য কি? 

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৪ মার্চ: সন্ধে বেলায় পশ্চিম আকাশে অর্ধ চন্দ্রের নীচে তারা। যা নিয়ে মুহূর্তেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। সুন্দর মহাজাগতিক দৃশ্য মোবাইল বন্দি করে সোশ্যাল সাইটে আপলোড করার হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু, তার মধ্যেই কৌতুহল জাগে এহেন ঘটনার রহস্য কি? 

চৈত্র মাসে চলছে নবরাত্রি। শুক্রবার ছিল নবরাত্রির তৃতীয় দিন। কথিত আছে-

পিণ্ডজপ্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্রকৈর্যুতা।

প্রসাদং তনুতে মহ্যং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা।।

দেবী চন্দ্রঘণ্টা দেবী পার্বতীর তৃতীয় রূপ। নবদুর্গার তৃতীয় রূপ চন্দ্রঘণ্টা। নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে তাঁর পূজা করা হয়। চন্দ্রঘন্টা হিমালয় কন্যা শিবের স্ত্রী। দেবীর মস্তকে ঘণ্টার আকারবিশিষ্ট একটি অর্ধ্বচন্দ্র শোভা পায়। তাই দেবীর নাম ‘চন্দ্রঘণ্টা’। দেবী চন্দ্রঘণ্টার পূজা নবরাত্রির তৃতীয় দিনে হয়। নবরাত্রির তৃতীয় দিনে এই দেবীর পুজো করলে দেবী সাধকের সকল দুর্গতি, বিঘ্ন নাশ করেন। দেবী চন্দ্রঘণ্টা সিংহবাহিনী (কাশীর মন্দিরে অবশ্য তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী), দশভূজা, দশপ্রহরণধারিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল। পরনে লাল শাড়ি, গায়ে নানাবিধ অলংকার। মহিষাসুর বধের আগে দেবতাদের সম্মিলিত জ্যোতি থেকে যখন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে, তখন দেবতারা তাঁকে সজ্জিত করলেন নিজ নিজ অস্ত্রে। ইন্দ্র সেই সময় তাঁর বাহন ঐরাবত হস্তির গলা থেকে ঘণ্টাটি খুলে নিয়ে তা থেকে আর একটি ঘণ্টা সৃষ্টি করে দিলেন দেবীকে। যুদ্ধকালে দেবী যখন ওই ঘণ্টা বাজালেন, তখন অসুর সৈন্যগণ হয়ে পড়ল নিস্তেজ। 

কাশীর প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী, দেবী চণ্ডঘণ্টার পূজা করে তাঁকে প্রসন্ন করতে পারলে যমঘণ্টার (যমের বাহন মহিষের গলায় বাঁধা ঘণ্টা) ধ্বনি পূজককে আর ভয় দেখাতে পারে না। দেবীর কৃপায় মহাপাতকীও পাপ থেকে উদ্ধার পান।

কাশীতে লক্ষ্মী চৌতারার চন্দুনাউয়ের গলিতে দেবী চন্দ্রঘণ্টার মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটিও ছোটো। দেবীমূর্তিও এখানে হাতখানেক লম্বা। দেবীর পাশে রাখা থাকে একটি বড়ো ঘণ্টা। আর দেবীকে পিছন থেকে ঘিরে থাকে নবদুর্গার অন্য দেবীদের আটটি ছোটো ছোটো মূর্তি।

শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে এই মন্দিরে প্রচুর লোকসমাগম হয়। কথিত আছে, এই দিন সাধকের মন মণিপুর চক্রে প্রবেশ করে এবং সাধকের দিব্যদর্শন লাভ হয়।

চন্দ্রঘণ্টা পূজার ফল অনেক। তাঁর পূজায় সাধকের বাধাবিঘ্ন ও পাপ বিনষ্ট হয় এবং সকল কষ্ট বিনষ্ট হয়। চন্দ্রঘণ্টার উপাসক দেবীর বাহন সিংহের মতো পরাক্রমী হয়। তাঁর ঘণ্টাধ্বনি সর্বদা চন্দ্রঘণ্টার ভক্তকে সর্ববিধ বিপদ থেকে রক্ষা করে। দেবীর পূজায় পূজকের মন পবিত্র হয়। তাঁর ধ্যান সকল প্রকার কল্যাণ ও সদগতি প্রদান করে। নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করা হয়। 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *