কেন বকেয়া সমস্ত পুরসভার ভোট একসঙ্গে নয়? রাজ্যের পরিকল্পনা জানতে চাইল হাইকোর্ট

রাজেন রায়, কলকাতা, ১ ডিসেম্বর: দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে রাজ্যের একাধিক পুরসভার নির্বাচন। সেখানে কেন আগে শুধুমাত্র হবে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন? ভোট ঘোষণার আগেই এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে পর পর দায়ের হয়েছিল দুটি জনস্বার্থ মামলা। একটি মামলা দায়ের করেছিলেন বিজেপির কলকাতা ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট কমিটির ইনচার্জ প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছিলেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। বুধবার দুটি মামলারই একসঙ্গে শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্থর এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। কেন বকেয়া সমস্ত পুরসভার ভোট একসঙ্গে করানো সম্ভব নয়, তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট।

এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই আবেদনকারী আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, কলকাতা পুরসভা মামলায় অবিলম্বে নির্বাচন স্থগিত করা হোক, কারণ মামলা বিচারাধীন অবস্থায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বিজেপির পক্ষের আইনজীবী শিখি আনন্দ বলেন, সমস্ত পুরসভার একসঙ্গে নির্বাচন করানোর মত তাদের পরিকাঠামো নেই বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আদালতের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই তাঁরা কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন, যা আদালত অবমাননার সামিল। তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই বিজ্ঞপ্তি খারিজ করা হোক। তাঁর অভিযোগ, দেড় বছর সময় থাকা সত্ত্বেও কেন ইভিএম তৈরি রাখলেন না কমিশনের চেয়ারম্যান? এর পরেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এর মধ্যে রাজ্যে ৮ দফায় বিধানসভা নির্বাচন এবং একাধিক উপনির্বাচন করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। একসঙ্গে হয়েছে গোয়া এবং ত্রিপুরা পুর নিগম নির্বাচন। প্রয়োজন হলে আরও সময় নিয়ে রাজ্যের ১১২ টি পুরনির্বাচন ও গণনার জন্য পরিকাঠামো প্রস্তুত করুক কমিশন।

জবাবে কথা বলতে উঠে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, কিন্তু ২ নভেম্বর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতা ও হাওড়া নির্বাচন করতে চেয়ে রাজ্য সরকারের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। প্রবর্তীকালে হাওড়া ও বালি এই দুই পুরসভার নির্বাচন আলাদা করার আবেদনও আসে। সংবিধানের ২৪৩ (জেড) ধারা অনুযায়ী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। আর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেই ২৬ নভেম্বরে কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি জানতে চান, বাকি পুরসভাগুলি কবে কত দফায় করবেন, আপনাদের হলফনামায় তার কোনও উল্লেখ নেই। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আপনাদের কাছে যা ইডিএম রয়েছে, তাতে ১১২টি পুরসভার নির্বাচন দু’দফায় কেন গম্ভব নয়? রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, এক সপ্তাহ সময় দিন। এর পরেই রাজ্যের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় বলেন, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে সব নির্বাচন। কলকাতায় করোনা টিকার প্রথম ডোজ ১০০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ ৯০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। তাই কলকাতাকে প্রথম বেছে নেওয়া হয়েছে।

এরপরই আদালতের নির্দেশ, বকেয়া পুরসভাগুলির ভোট নিয়ে রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কি পরিকল্পনা, তা পরবর্তী শুনানির সময়ে জানাতে হবে আদালতকে। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি– শুধু কলকাতা পুরনির্বাচন না কি বাকেয়া সমস্ত পুরসভার নির্বাচন– তার উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে পরবর্তী শুনানিতেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *