পাঠা বলির মধ্যে দিয়ে শুরু হবে অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজো

আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগনা, ১৮ অক্টোবর:
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহাকুমার বাদুড়িয়া ব্লকের আরবেলিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী বসু বাড়ির পুজো মানেই প্রাচীন সংস্কৃতির প্রবাহমান ধারা বয়ে চলা। বর্তমানে বাংলা সিনেমা ও সিরিয়াল জগতের বিখ্যাত টলিউড অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজো নামেই খ্যাত বসিরহাটের এই প্রাচীন পুজো।

অশোক নাথ বসুর বাড়ির পুজো প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন, বিশ্ব মহামারী করোনা আবহে যখন বহু প্রাচীন বাড়িগুলো পুজো বন্ধ রাখছে, ঠিক তখনই একেবারে ভিন্ন মত অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর পরিবারের।

প্রশাসনের ছাড়পত্র নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখেই এই পুজো আরম্ভ হবে, তারই কাজকর্ম চলছে বসু বাড়িতে, একদিকে যেমন প্রাচীন দালানকোঠা, লতা পাতা গাছ দিয়ে ভরে আছে সেগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে, অন্যদিকে এক চলার কাঠামোয় দেবীর রূপ তৈরি করতে বসু বাড়িতে বংশ-পরম্পরায় মূর্তি তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী।

মায়ের প্রতিমা তৈরি করার জন্য পাশেই ইছামতি নদী থেকে মাটি ও নদীর জল এনে আরম্ভ হয়েছে বসু বাড়ির প্রাচীন এক কাঠামোয় দেবী দুর্গার প্রতিমা নির্মাণ। প্রাচীনকাল থেকে কথিত আছে বসু বাড়ির প্রতিমা যতক্ষণ না দালানকোঠা থেকে বিসর্জন দেওয়া হবে ততক্ষণ সময় পর্যন্ত দেবী প্রতিমা গড়ার কারিগর অর্থাৎ মৃৎশিল্পী ওই বসু বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারবেন না।

এমনকি বাদুড়িয়া ব্লকে যত জায়গায় পুজো হয় সেইসব পুজোর মণ্ডপ থেকে কোনও প্রতিমা পুজো মণ্ডপ থেকে বাইরে বার করতে পারবে না কেউ, সে বারোয়ারি হোক আর জমিদার বাড়ির পুজো হোক, এই প্রথা মেনে পুজো হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।

এই বসু বাড়ির পুজোতে মহা ষষ্ঠীর দিন ছাগল বলির মধ্য দিয়ে দেবী পুজো আরম্ভ হয়, নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে ছাগল বলি হয়। সেই মাংস নিরামিষ রান্না করে প্রসাদ হিসাবে আশেপাশে বহু গ্রামে বিলি করা হয়। এই প্রসাদ জাতপাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে সমস্ত ধর্মের মানুষ গ্রহণ করে। এই রীতি এখনো চলে আসছে বসু বাড়ির পুজোতে।

অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর বাড়ির পুজো প্রাচীন ইতিহাস বহন করে চলে আসছে চারশো বছর ধরে, অভিনেতার মা ছায়া বসু জানান, পুজোর ক’দিন দালানকোঠায় মুক্তমঞ্চে কলাকুশলীদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমাদের পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে সব ধর্মের মানুষ এসে ভিড় জমায়।

এই ঐতিহ্যবাহী বসু বাড়ির পূজা দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোর কটা দিন এখানে এসে বসু বাড়ির মানুষদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করে, সেখানে কোনও ভেদাভেদ নেই, নেই মানুষের অহংকার, এই রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরে‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *