
আমাদের ভারত, ২৯ মার্চ: মৃত্যুর কারণ করোনা ভাইরাস। কিন্তু করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু নয়। পেটে খিদে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তাতেই প্রাণ গেল রণবীর নামে এক যুবকের। করোনা এভাবেও কেড়ে নিল এমনি একটা তরতাজা যুবকের প্রাণ।
আর কতটা পথ গেলে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো, সেই প্রশ্নই ভেসে উঠছিল দিল্লি উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে-চোখে। দেশজুড়ে লকডাউন। বন্ধ সমস্ত গণপরিবহন। তার মধ্যে ২৪০ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে গিয়ে মৃত্যু হল ওই যুবকের। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশ। দূরত্ব ৩২৬ কিলোমিটার। তার গ্রামের নাম মরেনা। ৩২৬ এর মধ্যে ২৪০ কিলোমিটার পথ চলে এসেছিলেন সে। তবু বাড়ি ফেরা হলো না।
পেশায় ডেলিভারি এজেন্ট দিল্লিতে কর্মরত। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হতেই হয়ে পড়েছিলেন বেকার। জমানো টাকা শেষ হয়ে আসছিল। বাঁচতে হলে ফিরতে হবে তাকে বাড়িতে। কিন্তু কে জানত এই পথই তার প্রাণ কেড়ে নেবে। ট্রেন-বাস সমস্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত হেঁটে বাড়ি পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রণবীর। পকেটে ছিল খুব সামান্য সঞ্চয়ের টাকা। পেটে খিদে আর দুচোখে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন। হাঁটতে শুরু করেছিল রনবীর। হাঁটতে হাঁটতে ২৪০ কিলোমিটার আসার পর আগ্রা জাতীয় সড়কের একটি চায়ের দোকানে বিশ্রাম নিতে বসে সে। চা বিস্কুট খায়। কিন্তু সেটাই শেষ খাওয়া তার। হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রণবীরের।
এই রনবীরের মতোই কয়েক হাজার মানুষ ঘরে ফেরার তাগিদে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে দিল্লির আনন্দ বিহার বাস স্ট্যান্ডে। করোনা সংক্রমণের চেয়েও তাদের মনে বেশি ভয় তারা হয়তো আর বাড়ি ফিরতে পারবে না। না খেতে পেয়েই মৃত্যু হবে তাদের।
রনবীরের মাত্র ৮০ কিলোমিটার পথ হাঁটা বাকি ছিল। যুদ্ধ জয়ের কাছে এসেও থেমে গেল সবটা। করোনায় সংক্রমিত না হয়েও করোনার কারণেই প্রাণ গেল তার।