বিরল প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগী জেডএসআই

আমাদের ভারত, ২৮ এপ্রিল: বিরল প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)। তারা ওড়িশার বন দফতরের বন্যপ্রাণ শাখার সঙ্গে একযোগে ২০২১ থেকে অলিভ রিডলে প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের ট্যাগিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

জেডএসআই-এর অধিকর্তা ডঃ ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার একথা জানিয়ে বলেছেন, জেডএসআই-এর এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে (অন্তত পরবর্তী ১০ বছরের জন্য) এই প্রজাতির ওপর নজর রাখার অঙ্গ হিসেবে এবং একইসঙ্গে প্রতিবছর তথ্য সংগ্রহ, ট্যাগিং এবং ট্যাগ পুনরুদ্ধারের তাগিদে এই  পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জেডএসআই-এর এসচুয়ারিন বায়োলজি রিজিওনাল সেন্টারের বিজ্ঞানী ও ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ডঃ অনিল মহাপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মার্ক রিক্যাপচার’ পদ্ধতি গ্রহণ করে বর্তমান সমীক্ষা চালানো হচ্ছে অলিভ রিডলে প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের বাসা, খাদ্যের সন্ধানে বাসা এবং মিলন পরবর্তী পরিযান, বাসা বাঁধার পরবর্তী পরিযান, এক বাসা থেকে আরেক বাসায় চলাচলের ধরনধারণ, প্রজনন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ মেয়াদ এবং বৃদ্ধি ইত্যাদি চিহ্নিত করার জন্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির নিউ পোর্টের ন্যাশনাল ব্যান্ড অ্যান্ড ট্র্যাক কোম্পানি (এনবিটিসি)-র তৈরি দুটি বিশেষ ট্যাগ ব্যবহার করা হয় পাখনায় যুক্ত করার জন্য। দুটি ট্যাগ জোড়া থাকে প্রথম বৃহৎ আকারের সামনের দিকের দুটি পাখনার কাছাকাছি, যাতে ট্যাগ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

ওড়িশা উপকূল বরাবর জেডএসআই-এর ট্যাগিং কর্মসূচি শুরু হয় ২০২১-এর জানুয়ারি মাস থেকে । এপর্যন্ত ৮,৪৫০টি কচ্ছপকে ট্যাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৮৮টি সঙ্গমযুক্ত জোড়, ৮,২৫২টি স্ত্রী কচ্ছপ এবং ১৯৮টি পুরুষ কচ্ছপ। 

এই সমীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য অলিভ রিডলে প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের পরিযান বা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় চলাচল আটকানো। ওড়িশা উপকূল বরাবর নজরদারি মাধ্যমে এবং পাখনায় কার্যকরী ট্যাগিং-এর মাধ্যমে এটি সম্ভব বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। সাগরবেলার পাশাপাশি ওড়িশা উপকূল, উপকূল অতিক্রান্ত এলাকায় নজরদারিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।এই উদ্যোগ একইসঙ্গে অলিভ রিডলে প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন এবং উপযুক্ত সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশগত বিষয়গুলিও বুঝতে সাহায্য করে। এতে কচ্ছপের সংখ্যার ওপর নজরদারি সঠিকভাবে হয়।

এছাড়া, বাসা বাঁধতে উদ্যত সামুদ্রিক কচ্ছপগুলির ওপর নজরদারি এবং ট্যাগ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে রাত্রেও পাহারা দেওয়া হয়। সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে বর্তমানে। এই প্রজাতির বিরলতার কথা মাথায় রেখেই বিবেচনা করে এই সমীক্ষা ভারতে অলিভ রিডলে কচ্ছপের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

এর পাশাপাশি, ট্যাগ পুনরুদ্ধারের ফলে এদের জনসংখ্যা সংক্রান্ত পরিযানের পথ এবং ভৌগোলিক প্রসার সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় যখন ট্যাগ করা কচ্ছপগুলি পুনরুদ্ধার করা হয় দূর থেকে। তাদের খাবার জায়গা, প্রজনন হার, বাসা বাঁধার মধ্যে বিরতিবা স্থিরভাবে বাসা বাঁধার হার বা বৃদ্ধির হার সবই জানা যায় যখন ট্যাগ করা কচ্ছপগুলিকে পুনরায় ধরা হয়। এর থেকে কচ্ছপগুলির সংখ্যারও গণনা করা যেতে পারে। ওড়িশা উপকূল বরাবর সামুদ্রিক কচ্ছপগুলির ওপর সমীক্ষা এখনও প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে। এই প্রাণীর জীববৈশিষ্ট্য এবং আচারআচরণের অনেক কিছুই এখনও অজানা। এই সমীক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে এই কাজ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ভারতে ওড়িশা উপকূল বরাবর সবচেয়ে বেশি অলিভ রিডলে বাসা বাঁধে গহিরমাথা, দেবী এবং রুশিকুল্যা সৈকতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *