২১ জুন থেকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে দেশবাসী, দীপাবলি পর্যন্ত ফ্রি রেশন পাবেন ৮০ কোটি মানুষ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

আমাদের ভারত, ৭ জুন: আজ থেকে আর মাত্র ১৪ দিন পর অর্থাৎ ২১ জুন থেকে দেশের সমস্ত মানুষ বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে। জাতির উদ্দেশ্যে আজ বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বড় ঘোষণা করে করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবেন। এর জন্য কোনও রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। এছাড়াও দীপাবলি পর্যন্ত গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা অন্তর্গত ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় টিকাকরণ নীতির দাবিতে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। দেশের শীর্ষ আদালতও টিকাকরণে কেন্দ্রীয় নীতি ঘোষণার কথা বলেছে। এরপর আজ বিনামূল্যে সমগ্র দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন এর জন্য রাজ্যকে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না। আগামী ২১ জুন থেকে ১৮-র ঊর্ধ্বে সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবে কেন্দ্র সরকার। একইসঙ্গে তিনি জানান যারা দ্রুত ভ্যাকসিন নিতে চান তাদের জন্য বেসরকারি ক্ষেত্র খোলা থাকবে। বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে তারা টিকা নিতে পারবেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরাসরি টিকা কিনতে পারবেন। তবে তারা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দেড়শ টাকার বেশি নিতে পারবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে গতবছর করোনার কারণে লকডাউনে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা যা আট মাসের বেশি ধরেও ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিয়েছিল তা মে–জুন মাসে আবারও ঘোষণা করা হয়েছে। সেই প্রকল্প দীপাবলি পর্যন্ত চলবে বলেও আজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ বক্তব্য রাখার শুরুতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে যারা নিজেদের স্বজনকে হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানান মোদী। তিনি বলেন, “গত ১০০ বছরে সবচেয়ে বড় মহামারী সঙ্গে লড়াই করছি আমরা।” তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন যে পরিমাণ ম্যাডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা তৈরি হয়েছিল ভারতের ইতিহাসে তা প্রথম। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ হয়েছে সেই সময়। ব্যাপক হারে অক্সিজেনের উৎপাদন বেড়েছে। বিশ্বের সমস্ত কোনা থেকে যেখান থেকে যা পাওয়া গেছে সব আনা হয়েছে।

মোদী বলেন, অদৃশ্য শত্রু সঙ্গে লড়াই করছে ভ্যাকসিন নামক রক্ষাকবচ। বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের চাহিদার তুলনায় নির্মাতার সংখ্যা অনেক কম। তিনি বলেন, ভাবুন যদি ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি না হতো তাহলে কি হতো? এ প্রসঙ্গে তিনি কংগ্রেসের সময়কার সরকারের সমালোচনা সুরে বলেন, আগে বিদেশে ভ্যাক্সিনেশন শেষ হলে তবেই ভারত ভ্যাকসিন পেত। ২০১৪ তে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এসে দেখে দেশে টিকাকরণের হার ৬০ শতাংশের আশেপাশে ছিল, যা অত্যন্ত চিন্তার। এই গতিতে টিকাকরণ চললে দেশে ১০০% টিকা পেতে ৪০ বছর সময় লাগত। সেই সমস্যা সমাধানের মিশন ইন্দ্রধনুস শুরু করে বিজেপি সরকার। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ হয়। পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে ভ্যাকসিনেশনের কভারেজ ৬৯-৯০ শতাংশে পৌঁছেছে।

মোদী বলেন,”আমরা যখন টিকাকরণের কাজে ১০০ শতাংশের দিকে এগোচ্ছি তখনই আঘাত হানে করোনা। সারা বিশ্বে প্রশ্ন ওঠে ভারতের এত বড় জনগোষ্ঠীকে কিভাবের ক্ষা করা সম্ভব? কিন্তু সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে ভারত এক বছরের মধ্যে দুটি মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিন লঞ্চ করেছে। ভারতের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছে ভারত অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে নেই।”

প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন গত বছর যখন এপ্রিল মাসে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা কয়েক হাজারের মধ্যে ছিল তখনই সরকার ভ্যাকসিন তৈরির টাস্কফোর্স তৈরি করে দেয়। এছাড়াও ভ্যাকসিন নির্মাতাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সম্পূর্ণ সাহায্য করা হয়। গবেষণার জন্য টাকা দেওয়া হয়। ভ্যাকসিন নির্মাতাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞরা শিশুদের নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রতিষেধকের ট্রায়াল’ শুরু হয়েছে। ন্যাজাল ভ্যাকসিনের গবেষণা চলছে। এই কাজ সফল হলে ভারতের টিকাকরণ অন্য গতি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্র সরকার মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শ ও বিরোধীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বলেন,”কারা করোনায় বেশি আশঙ্কা জনক, কাদের আগেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তার আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছে। সেজন্যই প্রথম সারির যোদ্ধারা আগে ভ্যাকসিন পেয়েছেন। কল্পনা করুন যদি দ্বিতীয় ঢেউ এর আগে এরা ভ্যাকসিন না পেতেন তাহলে কি হতো?” প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের কাছে বেশকিছু রাজ্য দাবি করেছিল টিকাকরণ রাজ্যের হাতে ছাড়া হোক। তার আগে কেন্দ্র সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই অনেক রাজ্য সরকার ভ্যাকসিনের কাজ করতে চেয়েছিল। তখন রাজ্যের চাহিদাকে উৎসাহ দিয়ে ১ মে থেকে ২৫% কাজ রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর একাধিক রাজ্য বলতে শুরু করে আগের নীতি সঠিক ছিল। যারা রাজ্যভিত্তিক ভ্যাকসিন করতে চেয়েছিল তারা ফের কেন্দ্রের নিয়মে ফেরত যেতে চাইছিলো। দেশবাসীর কথা ভেবে পুরোনো নিয়মে তারা ফিরতে চেয়েছেন। তাই রাজ্যের কাছে যে ২৫% টিকাকরণের কাজ দেওয়া হয়েছিল তা আবারও কেন্দ্রই করবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *