পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৫২) শ্রীশ্রী সন্তদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজের জন্মভূমি

আমাদের ভারত, ১৮ জানুয়ারি: দেশভাগের পূর্বে কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সন্ন্যাসী শ্রীশ্রী সন্তদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজের জন্মভূমি সিলেটের হবিগঞ্জে…. বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বামৈ গ্রামে শ্রীশ্রী গোপালী রাধাবিহারী আশ্রম (সন্তধাম)। এখানেই আজ থেকে ১৬৩ বছর পূর্বে আইনজীবী তারা কিশোর চৌধুরী ওরফে শ্রীশ্রী সন্তদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজ জন্মগ্রহন করেন।

তারা কিশোর চৌধুরীর পিতা জমিদার হরকিশোর চৌধুরী ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জের একজন প্রতাপশালী জমিদার। ৭ বছর বয়সী তারা কিশোর চৌধুরীকে নিজের তৈরি ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন জমিদার বাবা হরকিশোর চৌধুরী। অল্প বয়সে মাতৃহারা ছোট্ট তারাকিশোর রোজ সন্ধ্যায় ঠাকুমার মুখে রামায়ণ মহাভারত ও পুরাণাদি গল্প শ্রবণ করতেন এবং শাস্ত্র বিষয়ে তাঁর অনুরাগ বাল্যকালেই পরিলক্ষিত হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তারা কিশোর চৌধুরী সিলেট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৮৭৪ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষায় সমগ্র অসম প্রদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে গোল্ড মেডেল পুরষ্কার দেয়। এন্ট্রাস পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য অসম সরকারের কাছ থেকে পেতেন ২০ টাকা বৃত্তি। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য তারাকিশোর চৌধুরী কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ভর্তি হলেন। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে বি এ পাশ করেন। ১৮৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম এ এবং আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৫ সালে ফিরে এলেন জন্মভূমি সিলেট।

সিলেট বারে আইন পেশায় যোগ দেন। চার বছর সিলেট থাকার পর আবার কলকাতায় ফিরলেন। কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর যশ খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা হাইকোর্টের শ্রেষ্ট আইনজীবী স্যার রাসবিহারী ঘোষের পরেই ছিল আইনজীবী তারাকিশোর চৌধুরীর স্থান। কলকাতা বাড়িতে প্রতিদিন নারায়ণের নিত্য সেবা হতো। সিলেট জেলার অভাবগ্রস্ত ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য আত্নীয়স্বজন তার বাড়িতে আশ্রয় পেত। সিলেট জেলার লোকদের চাকুরী, ব্যবসা, লজিং, টিউশনীর ব্যবস্থা করে দিতেন কলকাতা শহরে।

১৮৯৪ সালে ২৪ আগষ্ট স্ত্রী সহ বৃন্দাবনে গমন করেন এবং সেখান থেকে ফিরে ধর্মকর্মে মন দেন। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন বৃন্দাবনে মন্দির প্রতিষ্টা করেন। তারা কিশোর চৌধুরী অনেক ধর্মগ্রন্থ রচনা করেন। ১৯১২ সালে বৃটিশ সরকার কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেন। তিনি হলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম বাঙালী অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি যে বেতন পেতেন সব টাকা বৃন্দাবনে পাঠিয়ে দিতেন।

১৯১৫ সালে আগষ্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন। বিচারপতির পদ যোগ দেন নাই। ১৯১৫ সালে ত্রিশ বছরের ওকালতি পেশা পরিত্যাগ করে বৃন্দাবনের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন। কলকাতা শহরের বাসাবাড়ি, ধনসম্পদ সবকিছু মানুষকে দান করে যান। অনেক ঋনী লোকের ঋণ পরিশোধ করে যান। কলকাতা শহর থেকে বৃন্দাবন যাবার সময় রেলের ভাড়া পর্যন্ত ছিল না।

জন্মভূমি বাংলাদেশের হবিগঞ্জের লাখাই এর সকল সম্পত্তি মন্দির এবং স্কুল কলেজে দান করেন। বৃন্দাবনে সন্ন্যাসী হওয়ার পর নাম হয় সন্তদাস বাবাজী। মহারাজ বৃন্দাবনে আসার পর তাঁকে কেউ কোনওদিন ঘুমাতে দেখেনি, আমৃত্যু ধ্যানরত অবস্থায় ছিলেন। ১৯৩৫ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

লেখা— মহম্মদ সফিউল ইসলাম। সূত্র— পুরনো কলকাতার গল্প ফেসবুক গ্রুপ। সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *