২ সাধু সহ ৩ জনকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে উগ্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি আখড়া পরিষদের

শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ২০ এপ্রিল:
মহারাষ্ট্রের পালাঘর জেলার গড়চিনচৌলি গ্রামে ২ সাধু সহ তিন জনের গণপিটুনিতে কুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবিতে সোচ্চার আখড়া পরিষদ। আখড়া পরিষদের সভাপতি মহন্ত নরেন্দ্র গিড়ি হুমকি দিয়েছেন মহারাষ্ট্র সরকার যদি পালাঘরে গণপিটুনিতে সাধুদের মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত কড়া পদক্ষেপ না করে তাহলে ৩ মের পর মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক সাধু উগ্র আন্দোলনে সামিল হবেন।

সারা দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রে। কিন্তু তার মধ্যে গণপিটুনিতে ২ সন্ন্যাসী সহ ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আরও বিপাকে পড়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মহারাষ্ট্রের পালাঘর জেলার গড়চিনচৌলি গ্রামে পুলিশের সামনেই দুই সাধু ও তাদের গাড়ির ড্রাইভারকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে উন্মত্ত জনতা। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

https://youtu.be/nBhh8Ushr1o

ঘটনায় আখড়া পরিষদের সভাপতি মহন্ত নরেন্দ্র গিরি হুমকি দিয়েছেন মহারাষ্ট্র সরকার যদি পালাঘরে গণপিটুনিতে সাধুদের মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত কড়া পদক্ষেপ না করে তা হলে ৩মের পর তারা মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে উগ্র আন্দোলনে সামিল হবেন। লক্ষাধিক সাধু নিয়ে এই আন্দোলনে নামবেন তারা বলে জানিয়েছেন। তার দাবি ওই গ্রামটিকে সিল করে, গুলি করে মারা উচিত। কারণ যারা সাধুদের এই ভাবে হত্যা করে তারা কখনোই মানুষ হতে পারে না, তারা রাক্ষস। আর রাক্ষসদের হত্যায় কোনো অপরাধ নেই। একই সঙ্গে তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে দাবি করেছেন, ওই ঘটনায় যেসমস্ত পুলিশ কর্মীরা নির্বিকার ছিলেন তাদের বরখাস্ত করা হোক।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1528741113958980&id=100004693181412

বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বাই থেকে সুরাটে এক গুরুভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ওই দুই সাধু। তাদের কাছে প্রশাসনের অনুমতি ছিল। কিন্তু জাতীয় সড়কের ধারে মহারাষ্ট্রের পালাঘর জেলার গড়চিনচৌলি গ্রামের কয়েকশো উন্মত্ত জনতা তাদের ঘিরে ধরে। পুলিশের সামনেই তাদের টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে লাঠি বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। মৃত তিন জনের মধ্যে একজন সাধু ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। উপস্থিত পুলিশও তিনজনকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ। মৃতদের নাম স্বামী কল্পবৃক্ষগিরি, স্বামী সুশীল গিরি, নীলেশ তেলগাড়ে।

ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে মহারাষ্ট্র পুলিশ। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় ১১০ জনকে।

নির্বিকার পুলিশের সামনেই বৃদ্ধ সাধু ও ড্রাইভারকে দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে জনতা। শিশু চোরের গুজবের কারণেই এই আক্রমণ বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের। তবে একটা বড় অংশের দাবি গেরুয়াধারী হবার কারণেই তাদের সাথে এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। ফলে ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার দু-দিন পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্বব ঠাকরে বলেছেন এই ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কোনও দোষী ছাড়া পাবে না। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ টুইট করে বলেন, ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে এই গণপিটুনির ঘটনা অমানবিক, নৃশংস। দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এই ঘটনা আরো বেশি উদ্বেগের। রাজ্য সরকারের কাছে তিনি উচ্চপর্যায়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও।

এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলিউডের অভিনেতা অনুপম খের , ফারহান আখতার। ঘটনাকে ভয়াবহ ও ন্যাক্কারজনক বলেছেন ক্রিকেটির ইরফান পাঠান, গৌতম গম্ভীর। দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *