সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৭ জুলাই: শিল্পাশ্রমে ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তের জীবনদীপ নির্বাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছুদিনের জন্য অনাথ হয়ে গিয়েছিল সাবেক মানভূম। করোনা আবহে ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁর আদর্শের কথা এবং জেলার ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের জানান দিতে ও প্রসার ঘটাতে তিরোধান দিবস পালন করা হল। লোক সেবক সংঘের উদ্যোগে পুরুলিয়া জেলাসদরের প্রাণ কেন্দ্রে তাঁর নামাঙ্কিত পার্কে অবস্থিত মূর্তিতে মালা পরিয়ে এবং ফুল নিবেদন করে দিনটি পালিত হল। জেলার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না কোনও সরকারি বা নির্বাচিত প্রতিনিধি।
পুরুলিয়ার নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তকে মানভূম গান্ধী বলা হয়। সাবেক মানভূম তথা দেশের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন তিনি। গান্ধীজির সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত। উনিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ইংরেজদের নির্মম শাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সান্মানিক মাজিস্ট্রেট কাজ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত আত্মোত্সর্গকারি সহকর্মীদের নিয়ে একটি আশ্রম গড়েছিলেন পুরুলিয়া শহরে। স্বদেশী দ্রব্যের প্রতি জেলাবাসীকে আকৃষ্ট করতে বিশেষ উদ্যোগ নিছিলেন তিনি। তাঁর আদর্শ ও দর্শনের বাস্তবরূপ দিতে অসহযোগী কর্মীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে শিক্ষা ছাড়াও অসহযোগ আন্দোলনের আলোয় ছাত্রদের জাতীয়তাবোধের পথ দেখিয়েছিলেন তিনি।এইভাবে সারা মানভুমে সেই সময়ে অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। পায়ে হেঁটেই গ্রামে গ্রামে প্রচার করতেন স্বদেশী ভাবধারা, চরকা-কাটায় অনুপ্রাণিত করতেন সবাইকে।
একাধিক পত্রিকার সম্পাদনায় ব্রিটিশ প্রশাসকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল তাঁর কলম। এর জন্য একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। মহাত্মা গান্ধীর খুব কাছের স্নেহভাজন নিবারণ মহান ত্যাগের আদর্শই তাঁকে মানভুমের আমজনতার মানসপটে আজ ধরে রেখেছে ‘ঋষি’র সন্মানে। তাই, শ্রদ্ধার সঙ্গে মাল্য দান,পুষ্পার্ঘ, গীতার স্লোক ও জাতীয় ধ্বনি র মাধ্যমে মৃত্যু দিন পালন করলেন সুশীল বাবু ছাড়াও সংঘের সদস্য অনিল মাহাতো, অত্রি চৌধুরী ও ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাস গুপ্তের নাতি প্রসাদ দাশগুপ্তসহ বিশিষ্টজনেরা।