আমাদের ভারত, ১৮ অক্টোবর: বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদী ভাবনা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে ভাবলে ভুল ভাববেন। পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। রাজ্যেও একাধিক জায়গায় যেখানে হিন্দুরা সংখ্যায় কম সেখানে মণ্ডপে হামলা, বিসর্জনে বাধা দেওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তাই হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাগ্রত হবার ডাক দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ দেখে এখনো যারা ঘরে বসে আছেন বা আনন্দে মেতে আছেন, তারা জেনে রাখুন আগামী দিনে আপনার বাড়ির মেয়েও সুরক্ষিত থাকবে না। বাংলাদেশ প্রতিমা, মন্ডপ ভাঙ্গচুরের পাশাপাশি হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে মা এবং তাঁর ১০ বছরের মেয়েকেও ধর্ষণ করা হয়েছে।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, বজরং বলির মূর্তির পায়ের কাছে নাকি কোরান রেখে দেওয়া হয়েছে এই অজুহাতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলল। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে দেশে হিন্দুদের সংখ্যা খাতায় কলমে মাত্র ৮ শতাংশ, বাস্তবে হয়তো তার থেকেও কম, সেখানে সেই সংখ্যালঘু হিন্দুদের কি আদৌ সাহস হবে তাদের দেবতার পায়ের কাছে সংখ্যাগুরুদের কোরান রেখে দেওয়ার? অথচ সেই অজুহাতে অত্যাচার শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর। মন্ডপে মন্ডপে হামলা হল, ভেঙ্গে দেওয়া হল দুর্গামূর্তি। আক্রমনের ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকল না। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে পরিচিত ইসকনের মন্দির যা সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে সেখানেও হামলা হল, সেখানে সন্ন্যাসীদের হত্যা করা হল।
সুকান্ত মজুমদার সতর্ক করে দেন, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যদি আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে বসে থাকি কিংবা আনন্দে মেতে থাকি, তাহলে জানবেন আগামী দিনে আপনার বাড়ির মেয়েও সুরক্ষিত নয়।”
তিনি গত বছর কলকাতার একটি পুজোর মণ্ডপে আজানের ধ্বনি দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তৃণমূলের নেতা পরেশ পাল পরিচালিত বেলাঘাটার ওই দুর্গা মন্ডপে গতবছর আজানের সুর বাজানো হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহারন হিসেবে। কিন্তু সেই পরেশ পাল যখন এক মৌলবীর সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেন তখন পাঁচ হাজার মুসলিম তাঁর বাড়ি ঘেরাও করেছিল। অতএব তিনিও সুরক্ষিত নন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশের এই উগ্র মৌলবাদী ভাবনা বাংলাদেশই সীমাবদ্ধ থাকবে ভাবলে ভুল ভাববেন। আজ কোরান অবমাননার দায়ে হামলা হচ্ছে। কাল বলবে গান শোনা যাবে না। গান ইসলাম বিরোধী কোরানে লেখা আছে। ফলে যারা গান শুনবে তাদের বাড়িতে হামলা হবে। কাল বলবে ছবি তোলা যাবে না, ছবি আঁকা যাবে না, দিদির ছবিও ঝোলানো যাবে না কারণ এটা ইসলামবিরোধী।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, মহম্মদ বখতিয়ার খিলজি যখন এসেছিল তখন লড়াই করেছিলো আমাদের পূর্ব পুরুষ। সেই জন্যেই এখনো আমাদের নামের পাশে মজুমদার সরকার উপাধিগুলো রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা মাথা নত করেনি। আর আমরাও মাথা নত করবো না। আমরাও লড়াই করব। পাঁচ হাজার বছর ধরে চেষ্টা করেও ভারতবর্ষের সনাতনী সংস্কৃতিকে বহু ধাক্কা দিলেও তার পরিবর্তন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন
ইদে কটা মসজিদে হামলা হয়েছে? পরমব্রতকে পাল্টা দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার
তিনি বলেন হিন্দুদের জাগ্রত হতে হবে। চপ শিল্প, পাঁচশো টাকা নিয়ে কিংবা সবুজ সাথী সাইকেল নিয়ে ভুলে গেলে চলবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে ৫০ বছর পরে আবারও পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পালাতে হবে আপনার আগামী প্রজন্মকে। আর তখন এই বাংলাদেশেও আপনি আশ্রয় পাবেন না। মূর্খের স্বর্গে বাস করা আমাদের ছাড়তে হবে। তিনি বলেন, বাঙালি শরৎচন্দ্র বললে মহেশ চেনে কিন্তু এই সেই শরৎচন্দ্র হিন্দু-মুসলিম সমস্যার কথা নিয়ে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হিন্দুরা যদি জাগ্রত না হয় হিন্দু মায়ের গর্ভের হিন্দু সন্তানও সুরক্ষিত নয়। তাহলে কি আপনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’কে সাম্প্রদায়িক বলবেন? ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতি আছে বলেই ভারতবর্ষে সেক্যুলারিজমের গল্প শোনা যায়। ইয়ে আজাদি ঝুটা হে বলা চিৎকার করা যায়। কিন্তু যদি সেকুলার ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্ম না থাকলে হিন্দু সংস্কৃতির না থাকলে আপনাদের পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতি আছে বলেই এখানে সেক্যুলারিজমের গল্প শোনা যায়, দাবি সুকান্ত মজুমদারের
তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গেও আজ দুর্গোৎসবে একের পর এক আঘাত নেমে এসেছে। করিমপুর, এগরায় বিসর্জনে বাধা পড়েছে। মন্ডপে হামলা হয়েছে। তাই প্রতিবাদে আমাদের সরব হতেই হবে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমাদের লড়াই করতে হবে।